Kohinoor

ইংল্যান্ডের থেকে কোহিনুর চাওয়া যাবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট, লাহৌরে ফেরানোর দাবি পাকিস্তানের

কুখ্যাত লাহৌর চুক্তির তিন নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, ‘শাহ সুজা-উল-মুলুকের কাছ থেকে রণজিৎ সিংহ যে কোহিনুর হিরে নিয়েছিলেন,  সেই হিরে ইংল্যান্ডের মহারাণিকে দেবেন দলীপ সিংহ।’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:৫০
Share:

এখন ইংল্যান্ডের রাণির মুকুটে শোভা পায় কোহিনুর। ফাইল চিত্র।

ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত হিরে কোহিনুর চাওয়া সম্ভব নয় ইংল্যান্ডের কাছ থেকে, এই বলে একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘‘ইংল্যান্ডের কাছ থেকে এই হিরে ফেরত চাওয়ার দাবির পিছনে কোনও আইনগত যুক্তি নেই।’’ কয়েক দিন আগে পাকিস্তান এই হিরে ফেরত চেয়ে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছিল ইংল্যান্ডের কাছে।

Advertisement

এর আগে ‘অল ইন্ডিয়া হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তোলা একই দাবি খারিজ করে দিয়েছিল ভারতের শীর্ষ আদালত। তখনও এই হিরে ফেরত চাওয়ার পিছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পায়নি দেশের শীর্ষ আদালত।

১৮৪৯ সালে পঞ্জাব দখলের পর ১১ বছরের পঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিংহের ছেলে দলীপ সিংহের সঙ্গে লাহৌর চুক্তি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই চুক্তিমাফিক পঞ্জাবের বালক রাজা দলীপ সিংহের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কোহিনুর হিরে নিজেদের হেফাজতে নেয়। একপাক্ষিক এই চুক্তিতে দলীপ সিংহের কাছ থেকে প্রায় জোর করেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এই হিরে, এমনটাই মত অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের। সেই কুখ্যাত লাহৌর চুক্তির তিন নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, ‘শাহ সুজা-উল-মুলুকের কাছ থেকে রণজিৎ সিংহ যে কোহিনুর হিরে নিয়েছিলেন, সেই হিরে ইংল্যান্ডের মহারাণিকে দেবেন দলীপ সিংহ।’

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোটেই স্বাধীনতা অর্জন করতে চায় ক্যাটালোনিয়া

যদি ১১ বছরের বালক দলীপ সিংহের কাছ থেকে এই হিরে কেড়ে নেওয়া নিয়ে বিবেকের দংশনে ভুগতেন রাণি ভিক্টোরিয়াও। ইংল্যান্ডে এই হিরে পৌঁছনর পর সে দেশে তুমুল উত্তেজনা হলেও তা তখনও ইংল্যান্ডের রাজমুকুটে জায়গা পায়নি। শোনা যায়, ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসে দলীপ সিংহের কাছ থেকে ব্যক্তিগত অনুরোধের মাধ্যমে এই কোহিনুর হিরে ফের উপহার হিসেবে নিয়েছিলেন রাণি ভিক্টোরিয়া। যদিও তা যে একদমই সাজানো ঘটনা ছিল, সেকথা বিভিন্ন সময় স্বীকার করে নিয়েছেন ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরাও। যদিও এই সাজানো ঘটনার পরই নিজের রাজমুকুটে কোহিনুর বসিয়েছিলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমরা বিভিন্ন নথি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর এই হিরে ফেরত পাওয়ার দাবির পিছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতের পুরনো সিদ্ধান্তই বহাল রাখছি।’’

আরও পড়ুন: ভুল শিক্ষা পেয়েছিল, মারা যাওয়ায় খুশি, বললেন শ্রীলঙ্কায় নাশকতার মূল চক্রীর বোন

কয়েক দিন আগে কোহিনুর হিরে ফেরত নিতে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছিল পাকিস্তানও। তাঁদের যুক্তি, লাহৌর ছিল শিখ সাম্রাজ্যের রাজধানী। লাহৌর চুক্তির মাধ্যমেই কোহিনুর নিজেদের হেফাজতে নেয় ইংল্যান্ড। লাহৌরেই রাখা ছিল কোহিনুর। তাই এই হিরে ফেরত আসবে লাহৌরেই।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধরী বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ রাজ পরিবারের হাত থেকে এই হিরে ফেরত নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা। এই হিরের লাহৌর জাদুঘরে ঠাঁই পাওয়া উচিত। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, বাংলার দুর্ভিক্ষ এবং কোহিনুর নিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ইংল্যান্ডের কাছে কলঙ্ক। প্রতিটি ঘটনার জন্যই ওঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কাছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement