কাছের মানুষকে হারিয়ে। সোমবার কোয়েটায়। ছবি: এএফপি
ফের মানববোমায় রক্তাক্ত পাকিস্তান। এ বার নিশানায় হাসপাতাল!
সোমবার পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায় এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন। আহত শতাধিক। এ দিন সকালে আদালতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন বালুচিস্তানের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিলাল আনোয়ার কাসি। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতালে তাঁর দেহ নিয়ে আসার পরে সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য থেকে শুরু করে সর্বস্তরের আইনজীবীরা। আসেন সাংবাদিকরাও। সেই সময়ে ফের কেঁপে ওঠে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ! আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয় হাসপাতালের মধ্যেই। তার পর কয়েক রাউন্ড গুলিও চলে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিহতদের বেশিরভাগই আইনজীবী। বিস্ফোরণের খবর পেয়েই পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী হাসপাতালটি বন্ধ করে দিয়েছে। কোয়েটার প্রতিটি হাসপাতালেই আপৎকালীন পরিস্থিতি জারি করা হয়েছে। আহতদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
আজ সন্ধেয় হাসপাতালে হামলার দায় স্বীকার করেছে জামাত-উর-আহরর নামে তেহরিক-ই তালিবান, পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠী। সম্প্রতি ইস্টারের দিন লাহৌরের একটি পার্কের মিছিলে হামলা চালিয়ে ৭২ জনকে খুন করে এই গোষ্ঠী। বিবৃতিতে সংগঠনের শীর্ষনেতা এহসানউল্লাহ এহসানের হুমকি, এমন হামলা আরও হবে।
পাক প্রশাসন এবং গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, পরিকল্পিত ভাবেই এ দিনের হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা! ছক কষে প্রথমে রাস্তায় আইনজীবী খুন আর তার পর হাসপাতালের ভিড়ে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ! যদিও প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের অন্য একটি সূত্র এখনও এই দু’টি ঘটনার যোগ নিয়ে সন্দিহান। দু’টি ঘটনার যোগ নিয়ে ধন্দে পুলিশও। তবে যে ভাবে ভরা হাসপাতালে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামলার নিন্দা করেছেন বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরি। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই হামলার পিছনে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’য়ের (ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকাল উইং) হাত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। হামলার নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর চেষ্টার প্রশংসা করে তিনি জানান, কোনও অবস্থাতেই বালুচিস্তানে অশান্তি মেনে নেওয়া হবে না। এ দিনই যাবতীয় বৈঠক বাতিল করে কোয়েটায় পৌঁছেছেন নওয়াজ।
পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে বালুচিস্তানে আইনজীবীদের নিশানা করে হামলা চলছে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সেখানকার আইনজীবীরা। সন্ত্রাসে দীর্ণ বালুচিস্তানে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার কী করছে— প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগটি-ও নিরাপত্তার গাফিলতির কথা মেনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি অবশ্যই রয়েছে। আমি নিজে তার তদন্তে নজর রাখছি।’’
দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সন্ত্রাস-মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে কোয়েটা। রয়েছে অনুপ্রবেশের সমস্যাও। কয়েক বছর ধরে আফগান তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্ব এই কোয়েটাকে কেন্দ্র করেই সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। গত মে মাসে মার্কিন ড্রোন হামলায় আফগান-তালিবান নেতা মুখতার আখতার মনসুরের মৃত্যু হয় এই কোয়েটাতেই। তবে সে সব সত্ত্বেও বালুচিস্তানের পরিস্থিতি যে এখনও একই জায়গায় রয়েছে, ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই হামলা।