মানুষের তৈরি বিশ্বের ব্যস্ততম খাল হল সুয়েজ খাল। উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণে লোহিত সাগরের সংযোগরক্ষাকারী খাল এটি।
জলপথে ইউরোপ থেকে এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থা সহজতর করে তুলেছে এই খাল। সম্প্রতি ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী এই রাস্তাটি অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
চিন থেকে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার পথে একটি বিশালাকার জাহাজ এই খালের আটকে গিয়েছে। গত ২৩ মার্চ ঘটনাটি ঘটে। তারপর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এই পথ।
সুয়েজ খাল পার হওয়ার সময়ই হাওয়ার দাপটে আংশিক উল্টে যায় জাহাজটি। জাহাজটি ৪০০ মিটার লম্বা এবং ৫৯ মিটার চওড়া। জাহাজটি সরানোর কাজ চলছে জোরকদমে। খুব দ্রুত সুয়েজ খালের রাস্তা ফাঁকা না করা গেলে বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যার প্রভাব পড়তে পারে মধ্যবিত্তের পকেটেও।
১৮৫৯ সাল থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত লাগাতার পরিশ্রমে তৈরি হয়েছিল এই খাল। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর এর আনুষ্ঠানিক সূচনা। এই জলপথ তৈরির আগে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় কোনও জাহাজ আসতে গেলে উত্তর আটলান্টিক সাগর হয়ে আফ্রিকা বরাবর ভারত মহাসাগর হয়ে পৌঁছতে হত। এই খালের ফলে উত্তর আটলান্টিক থেকে ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়েই অনেক কম সময়েই ভারত মহাসাগরে এসে পড়ে বাণিজ্য জাহাজগুলি।
সুয়েজ খাল তৈরির আগে আফ্রিকা মহাদেশ বরাবর ঘুরে আসতে জাহাজগুলিতে ৮ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হত। সময় লাগত ৮ থেকে ১০ দিন। এখন সেখানে এক দিনেই পেরিয়ে যাওয়া যায় সুয়েজ খালের মাধ্যমে। সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৯৩ কিলোমিটার।
২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর মোট ১৭ হাজার ২২৫টি জাহাজ যাতায়াত করেছিল এই খাল দিয়ে। অর্থাত্ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৭টি জাহাজ এই খাল পারাপার করেছে।
এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণে লোহিত সাগরের জলতল সমান হওয়ায় পানামা খালের মতো আলাদা করে জাহাজ পারাপারের জন্য লক ব্যবস্থা করার প্রয়োজন পড়েনি। ফলে পানামা খালের চেয়ে অনেক সহজেই জাহাজ যাতায়াত করতে পারে এই খালে।
পানামা খাল প্রশান্ত মহাসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে। পানামার দুই প্রান্তের দুই মহাসাগরের জলের উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে সমান হলেও পানামার ভিতরে যে হ্রদ ছিল তা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেকটাই উঁচুতে ছিল। ফলে জাহাজকে সেই উচ্চতায় তোলার জন্য আলাদা করে লক ব্যবস্থা বানাতে হয়। সুয়েজ খালের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা ছিল না।
মিশরের সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ এই সুয়েজ খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এই খালের উপর আধিপত্য বজায় রেখেছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। ১৯৫৬ সালের পর তা পুরোপুরি মিশর সরকারের অধীন হয়।
২০১৪ সালে মিশর সরকার খালটির প্রস্থ আরও বাড়ানোর কাজ শুরু করে। যাতে এর ধারণ ক্ষমতা দৈনিক ৪৯টি জাহাজ যাতায়াতের থেকে বেড়ে হয় ৯৭টি। এর জন্য খালটির প্রস্থ আরও ৩৫ কিলোমিটার বাড়ানো হয়। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ হয় ৫৯৪০ কোটি মিশরীয় পাউন্ড।
২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন সুয়েজ খাল চালু হয়। এটা আসলে বাইপাস। এর ফলে খালের চাপ খুব বেড়ে গেলে কিছু কিছু জাহাজ বাইপাস দিয়েও পার করানো হয়। সম্প্রতি সুয়েজ খাল অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর যেমন এই বাইপাস দিয়ে কিছু জাহাজ পার করার কাজ চলছে।
সারা বিশ্বের জলপথে বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ শিপিং কন্টেনার এই খাল দিয়েই যাতায়াত করে। এই খাল দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাল রফতানি করে রাশিয়া এবং সৌদি আরব। ভারত এবং চিন সবচেয়ে বেশি মাল আমদানি করে এই পথ দিয়ে।