সুয়েলা ব্রেভরম্যান। —ফাইল চিত্র।
নিজেকে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গরবিনি মেয়ে’ বলতে ভালবাসেন সুয়েলা ব্রেভরম্যান। ফলে ব্রিটেনের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কনজ়ারভেটিভ পার্টির এমপি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীকে বিতর্কে শশী তারুর সহজে ছেড়ে দেবেন না, বোঝাই গিয়েছিল।
ভারতে ব্রিটিশ অপশাসন নিয়ে ‘ইনগ্লোরিয়াস এম্পায়ার’ বইটির লেখক শশী অভিযোগ করলেন, কোন যুক্তিতে সাম্রাজ্য নিয়ে এত গদগদ সুয়েলা! ভারতে এত বছরের অপকীর্তি, জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যা, বাংলার মন্বন্তর নিয়ে ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, উল্টে উপনিবেশগুলির ইতিহাস পর্যন্ত ব্রিটেন এখন ভুলিয়ে দিতে চায়। তা ছাড়া, মরিশাসে ইংরেজদের চিনি কলে বাঁধা মজুর পরিবারের মেয়ের কন্যা সুয়েলা কী ভাবে সবই সোনালি অতীত বলে দেখেন।
সুয়েলা শান্ত স্বরে শশীকে বললেন, “আমরা দু’জনে এক সঙ্গে বসলে এ সব কথা তো উঠবেই। ইতিহাসের কিছু ঘটনার নিন্দা করা নিশ্চয় উচিত। কিন্তু আজকের চোখ দিয়ে অনেক আগের আগের প্রজন্মকে বিচার করায় আমার সায় নেই।” অতীত না-ঘেঁটে কমনওয়েলথ বা সমকালের বিশ্ব রাজনীতির বুনিয়াদে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে দেখায় জোর দিলেন তিনি। শনিবার এবিপি নেটওয়ার্কের ‘আইডিয়াজ় অব ইন্ডিয়া সামিট ৩.০’-এর আসর যুক্তি, তর্কে বেশ জমে উঠল।
অভিবাসন-বিরোধী বা ইসলাম-বিদ্বেষী তকমাধারী ‘নিষ্ঠুর’ সুয়েলাকে অনেকের ‘ক্রুয়েলা’ বলে ডাকার কথাও শশী মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “কিনিয়া, মরিশাস থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা, বাবা ব্রিটেনে সফল হলেও কেন আপনি অভিবাসনের বিরোধী? এটা কি নিজে উপরে উঠে মই কেড়ে নেওয়া নয়!” সুয়েলার বক্তব্য, “ব্রিটেন বরাবরের অভিবাসন বন্ধু। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে দেশ কাহিল। অভিবাসনের জন্য তরুণেরা বাড়ি কিনে সংসার শুরু করতে পারছে না! ডিঙিতে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে বেআইনি ভাবেও লোকে ঢুকছে। অভিবাসীদের সামগ্রিক সংখ্যা কমানো ভোটারদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা।”
ছোটবেলায় মা, দিদিমার সঙ্গে কলকাতা, কন্যাকুমারী, বৃন্দাবনে ঘুরেছেন সুয়েলা। বড় হয়েও ভারতে বেড়িয়েছেন। এ দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বা ক্রিকেট দলের প্রতাপের প্রশংসা করলেও ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য নিয়ে কিছু শর্ত মেনে চলায় বিশ্বাসী তিনি। বললেন, “আমি মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক অবশ্যই! তবে ব্রিটেন, ভারত দু’দেশের স্বার্থ মেনেই পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো উচিত।”
এ বছর নির্ধারিত ভোটে সুয়েলার কনজ়ারভেটিভ পার্টি এবং শশীর দল কংগ্রেস— কারও অবস্থাই ভাল নয় বলে লোকে খোঁচা দিচ্ছে। এই নিয়ে কৌতুক করছিলেন শশী। তবে দুই রাজনীতিবিদের মধ্যে বেশির ভাগ বিষয়েই মতভেদ প্রকট হল।
ব্রিটেন জুড়ে অভিবাসীদের দাপটের মতো কালোদের অধিকারের লড়াই, রূপান্তরকামী গোষ্ঠী বা পরিবেশবাদীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে বিচলিত সুয়েলা। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক শুদ্ধতার নামে বামপন্থী সুলভ মূর্খামি, জঙ্গি প্রতিবাদ বাড়ছে।” সারা বিশ্বের সঙ্কট নিয়ে প্রশ্নের জবাবেও ভাবতে সময় নিলেন না সুয়েলা। “পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ এবং হামাসের ইজরায়েল আক্রমণ নিন্দনীয়। ইজরায়েল আত্মরক্ষার জন্য সীমাবদ্ধতা মেনে প্রত্যাঘাত করলে, সেটা ওদের অধিকার। ইজরায়েলের এক তরফা নিরস্ত্রীকরণের দাবি, অতি সরল এবং বিপজ্জনক। যা পরিস্থিতি, ইজরায়েলের হামাসকে নিকেশ করা ছাড়া গতি নেই।” ইজরায়েলের হামলায় গাজায় হাজারো নারী, শিশুর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে মতদ্বৈধের সুরেই শশী আলোচনায় দাঁড়ি টানেন।