প্রতীকী ছবি।
বেনজির ও জটিল সমস্যায় পড়েছেন ফিল সেমোর। রাশিয়ার বিভিন্ন উড়ান সংস্থা বহু বিমান ভাড়া নিয়ে রেখেছে। ২৮ মার্চের আগে রাশিয়ার মাটি থেকে এই ধরনের ৫২০টি বিমান ফিরিয়ে নিতে হবে লিজ়িং সংস্থাগুলিকে। ফিলের মাথাব্যথার কারণ এটাই। কেননা তিনি ইউরোপীয় বিমান লিজ়িং সংস্থাগুলির সংগঠনের প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়া হাত তুলে দিয়েছে। তারা উজিয়ে গিয়ে বিমান পৌঁছে দিয়ে আসবে না। রাশিয়া বলে দিয়েছে, বিমান ফেরানোর কথা তোমাদের, তোমরা ফিরিয়ে নাও! টুইটে ফিল বলেছেন, এটা কী ভাবে সম্ভব? ৫২০টি বিমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য পাইলটদের তো যেতে হবে রাশিয়ায়। তাঁরা যাবেন কী ভাবে? সামরিক ও রুশ বিমান ছাড়া বাকি সব উড়ানের জন্য রাশিয়ার আকাশপথ বন্ধ। এমনকি ইউক্রেন, বেলারুশের আকাশও বন্ধ সাধারণ উড়ানের জন্য। তা হলে ৫২০টি বিমান ফিরিয়ে আনতে পাইলটেরা যাবেন কী করে?
কেন ফেরানো হচ্ছে এত বিমান?
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তার অন্যতম শর্ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে-সব সংস্থা এত দিন রাশিয়ার উড়ান সংস্থাগুলিকে বিমান ভাড়ায় দিয়েছে, তাদের সব বিমান ফিরিয়ে নিতে হবে। সমস্যার সূত্রপাত তা নিয়েই, টুইটে জানিয়েছেন ফিল।
বিশ্ব জুড়ে যে-সব বিমান উড়ে বেড়ায়, তার অধিকাংশই ভাড়ায় নেওয়া। খুব কম ক্ষেত্রেই গাঁটের কড়ি খরচ করে উড়ান সংস্থা বিমান সরাসরি কিনে নেয়। বিমান কেনার জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা রয়েছে। তারা কেনে। তার পরে উড়ান সংস্থাগুলি তাদের কাছ থেকে ভাড়ায় নেয়। তাতে আর্থিক ভাবে লাভবান হয় উড়ান সংস্থাগুলি।
ফিল জানাচ্ছেন, তর্কের খাতিরে কোনও ভাবে পাইলটদের যদি রাশিয়ায় পৌঁছে দেওয়াও যায়, তা হলেও তো সমস্যা! কারণ, সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার সময় ভাড়ার চুক্তি শেষ হলেই বিমানগুলিকে আর রাশিয়ার বিমান বলে গণ্য করা হবে না। তখন তার গায়ে লাগবে বিদেশি বিমানের তকমা। আর রাশিয়ার আকাশে এখন কোনও ধরনের বিদেশি বিমানকে উড়তে দেওয়া হচ্ছে না। ফিলের প্রশ্ন, তখন সেই বিমান নিয়ে পাইলটেরা ফিরবেন কী করে?
আরও সমস্যা হল, চুক্তি অনুযায়ী যারা মাঝপথে চুক্তি বাতিল করবে, তাদের প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিলের দায় পড়বে বিমান ভাড়া দেওয়া সংস্থাগুলির ঘাড়েই। ফিলের বক্তব্য, অঙ্ক কষে দেখা যাচ্ছে, এর ফলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে যত অর্থ দিতে হবে, তাতে দেউলিয়া হয়ে যাবে ইউরোপীয় সংস্থাগুলি। তার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার দরুন ব্যাঙ্কে লেনদেন বন্ধ থাকায় চাইলেও রুশ উড়ান সংস্থাগুলি ফেব্রুয়ারির বিমান ভাড়ার অর্থ দিতে পারছে না। অথচ ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হবে ইউরোপীয় সংস্থাগুলিকে।
ফিলের দুশ্চিন্তা, সব বিমান যদি রাশিয়া থেকে ভাড়া দেওয়া সংস্থার কাছে ফিরেও আসে, তার পরে কী হবে! সেই সব বিমান ফের ভাড়া নেবে কে? আশঙ্কা, ইউরোপীয় সংস্থাগুলি না পারবে সেগুলি ভাড়া দিতে, না পারবে কাউকে বিক্রি করতে। ফিলের আরও আশঙ্কা, রাশিয়া থেকে তাঁরা বিমান ফিরিয়ে আনলে রাশিয়ার তো বিমান লাগবে। এই সুযোগে আমেরিকার বোয়িং সংস্থার বিমান কিনে সে-দেশের বিমান ভাড়া দেওয়া সংস্থাগুলি তা রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেবে। মার খাবে ইউরোপের বিমান ভাড়া দেওয়া সংস্থাগুলি এবং এয়ারবাস সংস্থা।