করোনার দাপটে ত্রস্ত বিশ্ব।
গত বছর ডিসেম্বরের শেষে চিন থেকে শুরু। একে একে ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কামড় বসিয়ে ইউরোপ পাড়ি। নোভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে ইটালিতে। স্পেনের অবস্থাও কাহিল। এরই মধ্যে মারণ ভাইরাসের ভরকেন্দ্র এখন আমেরিকা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। আগামী কয়েক দিনে নিউ ইয়র্ক তা টের পেতে চলেছে বলে আশঙ্কা। একদল শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, এমনও হতে পারে, এই করোনাভাইরাস সিজনাল ডিজিজ বা ঋতুকালীন রোগ হয়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে এ যাত্রা মুক্তি মিললেও সামনের বছরে নতুন করে হামলা চালাতে পারে সে। দ্রুত ও কার্যকরী প্রতিষেধক আবিষ্কার তাই ভীষণই জরুরি।
আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’-এর বিজ্ঞানী দলের প্রধান অ্যান্টনি ফসি জানান, তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণের দিকে (চিনে) শীত যখন জাঁকিয়ে পড়েছে, ঠিক সে সময়ে প্রথম থাবা বসায় করোনা। ফসি বলেন, ‘‘আমরা যা দেখছি... যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে ঘটেছে, সব ক’টি দেশেই সংক্রমণের সময়ে শীত ছিল ভাল। আমাদের আশঙ্কা, এ বারের মতো কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও, সামনের বছর শীতের শুরুতে হয়তো আবার এর প্রকোপ দেখা যাবে। যদি সত্যিই এটি এই ঋতুর নতুন রোগ হয়ে ওঠে।’’ ফসির বক্তব্য অনুযায়ী, গরম বা আর্দ্র পরিবেশের তুলনায় শীতে ভাইরাসটি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। চিনের একটি গবেষণাপত্রেও একই দাবি করা হয়েছে। যদিও এ ধরনের কোনও পর্যবেক্ষণকে এখনই চূড়ান্ত বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে এই অনুমান বা সন্দেহের পিছনে কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ফসিরা। এক, ‘রেসপিরেটরি ড্রপলেটস’ বা শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি, কাশির সঙ্গে বেরোনো তরলের মধ্যে থাকা ভাইরাস শীতকালে বেশি ক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। দুই, ঠান্ডায় মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আরও একটি সম্ভাব্য কারণ, গরমে যে কোনও জিনিসের সারফেসে থাকা ভাইরাস তাড়াতাড়ি মরে যায়। কারণ তাদের আনুবীক্ষণিক শরীরকে ঘিরে থাকা ফ্যাট বা চর্বির স্তর দ্রুত শুকিয়ে যায় গরমে। তাই ফসিদের আশা, গরম পড়লে এই ভাইরাস তার ঢাল-তরোয়াল নামিয়ে রাখবে। কিন্তু পরের বছর সে আবার ফিরে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুদ্ধে নামার জন্য কিছুটা সময় পাবেন বিজ্ঞানীরা।