স্পেনের বার্সেলোনায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ঘাতক ভ্যানের চালককে চিহ্নিত করল পুলিশ। তার নাম ইউনেস আবুইয়াকুব। মরক্কোর নাগরিক ২২ এই জঙ্গির খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে স্পেনের পুলিশ। তার একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্সেলোনার ‘লা রামব্লা’ রাস্তায় ভ্যান নিয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রাণ যায় ১৩ জনের। এই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এর পরে শুক্রবার ভোরে স্পেনের সৈতক শহর কামব্রিলসে গাড়ি নিয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। নিহত হন এক মহিলা। পুলিশের দাবি আরও বড়সড় হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা।
এই জো়ড়া হামলার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে বুধবার রাতে বার্সেলোনার দক্ষিণে আলসানারের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এক স্প্যানিশ নাগরিকের। শনিবার ক্যাটালানের পুলিশকর্তা জোশেপ লুইস ত্রাপেরো জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরক বার্সেলোনার হামলায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। বিস্ফোরক ডিভাইস বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ওই ডিভাইস দিয়ে গাড়ি বোমা বানিয়ে বার্সেলোনার একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরকের অভাবে জঙ্গিরা তড়িঘড়ি ভ্যান এবং গাড়ি নিয়ে দু’জায়গায় হামলা চালায় বলে মনে করছে পুলিশ। আলসানারের ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর গ্যাসের টিন উদ্ধার হয়েছে।
লা রামব্লায় জঙ্গি হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একটি কালো অডি গাড়ি নিয়ে কামব্রিলসে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেখানে পুলিশ গুলি করে মারে পাঁচ জঙ্গিকে। এ দিন তাদের মধ্যে তিন জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। লুইস ত্রাপেরো জানিয়েছেন, তারা হলো মুসা ঔকাবীর (১৭), সৈয়দ আল্লাহ (১৮) এবং মহম্মদ হায়চামি (২৪)। তিন জনেই মরক্কোর নাগরিক। বাকি দুই নিহত জঙ্গির পরিচয় জানা যায়নি।
স্পেনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, বার্সেলোনার ভ্যানচালক ছিল এই মুসাই। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে, মুসা নয়, ভ্যানটি চালাচ্ছিল ইউনেস আবুইয়াকুব। পরে গোলামালের সুযোগে সাধারাণ মানুষের ভিড়ে মিশে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালায় সে। আবুইয়াকুব ক্যাটালোন প্রদেশের রিপোল শহরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রের দাবি, আবুইয়াকুব শুধু ভ্যানটির চালকই ছিল না, হামলার পরিকল্পাটিও তার। আইএস মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েই সে এই হামলা চালিয়েছে।
সহানুভূতি: আহতদের সঙ্গে দেখা করতে বার্সেলোনার হাসপাতালে স্পেনের রাজকুমারী লেতিজিয়া। এপি
বার্সেলোনার ‘লা রামব্লাঁ’-য় হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিক টাউনে উদ্ধার হয় একটি পরিত্যক্ত ভাড়া গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহার করেই কয়েক জন জঙ্গি পালিয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। তাদের মধ্যে আবুইয়াকুবও আছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা এই লা রামব্লা। রাস্তাটি শুধু পথচারীদের জন্য। স্পেনের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই জায়গায় হামলায় হতাহতের মধ্যে মোট ২৪টি দেশের নাগরিক রয়েছেন। এই লা রামব্লার রাস্তা এখন ঢেকে গিয়েছে ফুলে ফুলে। যে ফুল জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষ।
এই জোড়া হামলার ঘটনার তদন্তে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে মুসার দাদা দ্রিস ঔকাবীর। তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই মুসা ঘাতক ভ্যানটি ভাড়া করেছিল।
তাঁর দুই ছেলে জঙ্গি বলে মানতে পারছেন না মুসা ও দ্রিসের বাবা। তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবার একেবারে ভেঙে পড়েছে।’’ মুসা মারা গিয়েছে। দ্রিস গ্রেফতার হয়েছে। শোকস্তব্ধ বাবার আর্তি, ‘‘দ্রিস যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয়, দুই ছেলেকে আমি হারাতে পারব না।’’