— প্রতীকী চিত্র।
বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সক্রিয়তার পিছনে বেজিংয়ের ভূমিকা কতটা তা খতিয়ে দেখতে চাইছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এখন পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও ভূকৌশলগত ভাবে যে জায়গায় রয়েছে, তাতে তাদের পক্ষে ঢাকাকে রফতানি ও অর্থনীতির প্রশ্নে চাঙ্গা রাখা কঠিন। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চাইলেও বিনিময়ে ঢাকাকে দেওয়ার মতো কোনও কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক পুঁজি নেই ইসলামাবাদের কাছে।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ড্রাগনের প্রচ্ছন্ন হাত গোটা বিষয়টির পিছনে কতটা তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। আজ ঢাকায় আইএসআই সক্রিয়তা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যা ঘটছে তার সঙ্গে যদি আমাদের নিরাপত্তা স্বার্থ জড়িয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে নজরে রাখা হবে। যদি পদক্ষেপ করার প্রয়োজন হয়, করা হবে।”
ঘটনা হল, ঠিক চার দিন আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন চিন সফরে গিয়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে একটি বৈঠক সেরে এসেছেন। সূত্রের খবর, এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চিন যাত্রার ভিত তৈরি করা। সব ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই ইউনূস যেতে পারেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে। পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও গভীর করার পাশাপাশি কথা হবে আঞ্চলিক এবং ভূকৌশলগত বিষয় নিয়েও। সূত্রে এ কথাও জানা গিয়েছে, তৌহিদ তাঁর বৈঠকে বাংলাদেশের চিনের প্রতি নির্ভরতা ও আনুগত্যের বার্তা স্পষ্ট করেই দিয়েছেন ওয়াং ই-কে। জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রশ্নে বাংলাদেশে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে।
অন্য দিকে চিনা বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশের উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং শহরটিকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হবে। সেখানকার ৩ থেকে ৪টি বড় হাসপাতালে বাংলাদেশের রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং সে ভাবে পরিকাঠামোর অদলবদল করা হবে। বিষয়টি নজরে রাখছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের জেরে হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসার কড়াকড়ি করে রেখেছে ভারত। এর ফলে সে দেশের অসুস্থ মানুষদের ভারতে এসে (বেশির ভাগই কলকাতায়) চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চিনের আগ বাড়িয়ে বাংলাদেশকে চিকিৎসা পর্যটনের প্রস্তাব দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। চিনের বিদেশমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে বেজিং। সে দেশের সুস্থিতি, সংস্কার, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পাশে রয়েছে চিন। প্রসঙ্গত এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ইউনূস। ভারতের সঙ্গে যখন সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে জোরদার সংঘাত চলছে তখন চিনের দূত ইউনূসকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, কোনও স্বাধীন সার্বভৌম সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা তাঁদের নীতি নয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন আমেরিকার নবনিযুক্ত বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর সঙ্গে। বাংলাদেশের চিনের সক্রিয়তার কথা, আইএসআই-এর প্রভাব বাড়ার বিষয়গুলি তিনি আমেরিকার কর্তার কাছে বলেছেন বলেই সূত্রের খবর। বন্ধু দেশগুলিকে নিয়ে পাকিস্তানের নৌবাহিনী ২ বছর অন্তর করাচিতে একটি মহড়ার আয়োজন করে। ‘আমন-২৫’ নামে মার্চের মহড়ায় এই প্রথম অংশ নিতে চলেছে বাংলাদেশের নৌবাহিনীও। পাকিস্তানি দলটির ঢাকা সফরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত নজর রাখছে আগামী মাসে বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দারের সম্ভাব্য সফরের দিকেও। কায়রোয় ডি-৮ সংগঠনের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। সেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শোধরানোর জন্য বাণিজ্যিক ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর নানা উপায় নিয়ে দুই নেতা কথা বলেন। একই সঙ্গে সার্ক সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে পাকিস্তানের সহযোগিতা চান ইউনূস।
সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদতের কারণে ভারত হাত গুটিয়ে নেওয়ায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির সহযোগিতা সংগঠন সার্ক কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউনূসের সার্ক নিয়ে তৎপর হওয়া ভারতকে কিছুটা চাপে ফেলতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।