মুখ খুলেই হুঁশিয়ারি।
এখনই সেনা পাঠালে মলদ্বীপের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে জানিয়ে দিল চিন। গত কাল ভারতের কাছে সামরিক হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ। আজ এই প্রেক্ষিতে ভারতের নাম না-করেই চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘‘এটা ওদের ঘরোয়া সঙ্কট। তাই সেনা পাঠিয়ে জটিলতা বাড়ানো অর্থহীন। বরং মলদ্বীপের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করাটাই এখন সব চেয়ে জরুরি।’’
জরুরি অবস্থায় জেরবার দ্বীপরাষ্ট্র। পার্লামেন্টে পুলিশ। আর হাজতে প্রধান বিচারপতি। এ দিকে চাপের মুখে কাল রাতে ইউ-টার্ন নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার যে রায় নিয়ে অশান্তির শুরু, কাল শীর্ষ আদালত নিজেই তা খারিজ করে দিয়েছে। মলদ্বীপ নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জরুরি অবস্থা তুলে অবিলম্বে দেশে সুশাসন ফেরানোর কথাও বলেন তিনি।
তবু চিন বলছে— বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় ওরা নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে। বাইরের কারও এতে নাক গলানোর দরকার নেই। কিন্তু বিরোধী দলের কথা শুনছে কে! এ নিয়ে বেজিং কি ইয়ামিন সরকারকে কোনও পরামর্শ দিয়েছে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নটা এড়িয়েই গেলেন চিনা মুখপাত্র।
মলদ্বীপে বিরোধীদের মুখ তথা নির্বাসিত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাশিদ এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার আশ্রয়ে। আজও তিনি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইয়ামিনের ইস্তফার পাশাপাশি, অবিলম্বে দুই বিচারপতি এবং গৃহবন্দি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্দুল গায়ুমের (৮০) মুক্তি দাবি করেছেন নাশিদ। তাঁর অভিযোগ, বিচারপতিদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে হাজতে। আর গায়ুম নিজে থেকেই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তাই চিনের আপত্তি উড়িয়ে ফের ভারতকে ত্রাতার ভূমিকায় দেখতে চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ভারত কি সেনা পাঠাবে? প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র বলছে, বাহিনী তৈরি। কর্মসূত্রে মলদ্বীপে বিপুল
সংখ্যক ভারতীয় রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, তাঁদের উদ্ধারের প্রয়োজনে রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানিয়ে ভারত সেনা পাঠাতেই পারে। আর কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এই পরিস্থিতিতে দিল্লির কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগও থাকছে।
মলদ্বীপে বিরোধীদের অভিযোগ, উদ্ভূত সঙ্কটের পিছনে বেজিংই উস্কানি দিচ্ছে। ক্ষমতায় এসেই একগুচ্ছ চিনা প্রকল্পে সম্মতি দেন ইয়ামিন। বেজিংয়ের সঙ্গে বিতর্কিত ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’তেও সায় দিয়েছে তাঁর সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাই ইয়ামিনকেই গদিতে রাখতে চাইছে চিন।
চিনা মুখপাত্র অবশ্য আজ এ সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে জানান, মলদ্বীপের সঙ্গে বরাবরই তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আর মুক্ত বাণিজ্য নীতির কারণে দু’পক্ষই লাভবান হয়েছে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে আজ অবশ্য ইয়ামিন সব আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মলদ্বীপের পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন।