এভারেস্ট অভিযানে জটিলতা

১২০ ঘণ্টা পরে ধ্বংসস্তূপে প্রাণের স্পন্দন

ভেঙে পড়া গেস্ট হাউস থেকে ক্ষীণ একটা আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য। শনিবারের সেই ভয়াল ভূমিকম্পের পরে কেটে গিয়েছে পাঁচটা দিন। তবু আশায় সে দিকে এগিয়ে গিয়েছিল উদ্ধারকারী দলটি। আর তার ফলও মিলেছে হাতে নাতে। আজ কাঠমান্ডুর একান্তিপুর এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক কিশোরকে। নাম পেম্বা লামা। বছর ষোলোর পেম্বার বাড়ি নেপালের নুয়াকোট এলাকায়। ভেঙে পড়া ওই গেস্ট হাউসে সে কাজ করত। ভূমিকম্পের জেরে যখন গোটা বাড়িটা ধসে পড়ছিল, বেরোবার রাস্তা পায়নি পেম্বা। শেষে ওই বাড়িরই দু’টি থামের মাঝে আটকে পড়ে সে। এই ক’দিনে কোনও ভাবেই বেরোতে পারেনি পেম্বা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:০২
Share:

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পেম্বাকে। ছবি: এএফপি।

ভেঙে পড়া গেস্ট হাউস থেকে ক্ষীণ একটা আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য। শনিবারের সেই ভয়াল ভূমিকম্পের পরে কেটে গিয়েছে পাঁচটা দিন। তবু আশায় সে দিকে এগিয়ে গিয়েছিল উদ্ধারকারী দলটি। আর তার ফলও মিলেছে হাতে নাতে।

Advertisement

আজ কাঠমান্ডুর একান্তিপুর এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক কিশোরকে। নাম পেম্বা লামা। বছর ষোলোর পেম্বার বাড়ি নেপালের নুয়াকোট এলাকায়। ভেঙে পড়া ওই গেস্ট হাউসে সে কাজ করত। ভূমিকম্পের জেরে যখন গোটা বাড়িটা ধসে পড়ছিল, বেরোবার রাস্তা পায়নি পেম্বা। শেষে ওই বাড়িরই দু’টি থামের মাঝে আটকে পড়ে সে। এই ক’দিনে কোনও ভাবেই বেরোতে পারেনি পেম্বা। শেষে আজ সকালে উদ্ধারকারীদের কথাবার্তা কানে আসে তার। মনের জোরে গলা থেকে কোনও মতে আওয়াজ বার করে উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পেম্বা।

নেপালের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্য ওয়াই পি গৌতম আজ পেম্বাকে উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন। তিনিই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরকে। ‘‘জীবিত অবস্থায় দেখা মাত্রই আমরা ওকে জল দিই। নিমেষের মধ্যে পুরো জলটা খেয়ে ফেলে ও। তার পর এগিয়ে দেওয়া হয় ফলের রসের বোতল। এর পর আস্তে আস্তে ধ্বংসস্তূপ কেটে ওকে বার করা হয়। টানা ১২০ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে ছিল ছেলেটি।’’ গৌতম জানিয়েছেন, পেম্বার শরীর দুর্বল। তবে মারাত্মক কোনও জখম নেই। তাকে একটি অস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

কয়েক ঘণ্টা পরে অল্প কিছু দূরে নেপালের মূল বাস টার্মিনাসের ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছেন বছর তিরিশের মহিলা কৃষ্ণাদেবী খড়কা।

নেপালের পুলিশ আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে ১৫টি দেশের পাঠানো দল একসঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। গত পাঁচ দিনে প্রায় এগারোশো মানুষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেছে তারা। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে জীবিত অবস্থায় কাউকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হচ্ছে। এর মধ্যে আজ সকাল থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে গোটা নেপাল জুড়ে। আর তার ফলে উদ্ধারকাজ ভীষণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনোই এখন তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভূকম্পে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন বলে ধারণা নেপাল সেনার প্রধান জেনারেল গৌরব রানার।

আজ সকালে আরও দু’বার কেঁপেছে কাঠমান্ডু। তীব্রতা অবশ্য বেশি ছিল না।

এর মধ্যেই এভারেস্ট অভিযান নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জটিলতা। নেপালের পর্যটন দফতরের তরফে আজ সকালে ঘোষণা করা হয়েছিল, এ বারের মতো এভারেস্ট অভিযান বাতিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পর্যটন দফতরের প্রধান তুলসি গৌতম দাবি করেছিলেন, খুম্বু আইসফলে ক্ষতিগ্রস্ত সিঁড়িগুলি আগামী দু’তিন দিনে সারিয়ে ফ‌েলা হবে। তাই তাঁদের আশা, আগামী সপ্তাহেই এভারেস্ট অভিযান শুরু করা যেতে পারে। বেসক্যাম্প থেকে অভিযাত্রীদের এখনই নেমে আসতেও বারণ করেছেন তুলসি। কিন্তু তুলসির এই দাবির সঙ্গেই তৈরি হয়েছে এক নতুন জটিলতা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিনিধি দেবদাস নন্দী কাঠমান্ডু থেকে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, অভিযান চলবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেনি নেপাল সরকার। পর্বত আরোহণ সংস্থাগুলি আগামিকাল ফের বৈঠকে বসবে। সেই সিদ্ধান্তের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে বেসক্যাম্প।

পশ্চিমবঙ্গের অভিযাত্রীদের মধ্যে দেবরাজ দত্ত, প্রদীপ সাহু ও চেতনা সাহু এখনও বেসক্যাম্পে আছেন। বাকি ৯ অভিযাত্রী লুকলার দিকে নামা শুরু করেছেন। লুকলায় এখন প্রচুর অভিযাত্রীর ভিড়। সেখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অভিযাত্রীদের কাঠমান্ডু সরিয়ে নেওয়া চেষ্টা করছে সরকারি প্রতিনিধি দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement