Sharada Peeth

ধ্বংসের অপেক্ষায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই হিন্দু তীর্থক্ষেত্র

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নীলম নদীর তীরে পাহাড়ি গ্রাম শারদা। এখানেই আছে সুপ্রাচীন তীর্থক্ষেত্র শারদা পীঠ। হিন্দু বিশ্বাস মতে ১৮টি মহাশক্তিপীঠের অন্যতম এই মন্দির।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:১০
Share:
০১ ১১

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নীলম নদীর তীরে পাহাড়ি গ্রাম শারদা। এখানেই আছে সুপ্রাচীন তীর্থক্ষেত্র শারদা পীঠ। হিন্দু বিশ্বাস মতে ১৮টি মহাশক্তিপীঠের অন্যতম এই মন্দির। হিন্দু ধর্ম মতে, এখানে সতীর ডান হাত পড়েছিল। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই শারদা পীঠ হয়ে উঠেছিল বৌদ্ধধর্মের অন্যতম জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।

০২ ১১

উপমহাদেশে জ্ঞানচর্চার অন্যতম কেন্দ্র এই শারদা পীঠে এক সময় অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করেছিলেন কলহন, আদি শঙ্করাচার্য্য, কুমারজীবের মতো পণ্ডিতেরা। পাণিনি সহ আরও অনেক ভারতীয় পণ্ডিতের লেখা দীর্ঘদিন এই মন্দিরে রাখা ছিল বলে বিশ্বাস ঐতিহাসিকদের। ধ্বংসাবশেষ ছা়ড়া এই মন্দিরের এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

Advertisement
০৩ ১১

প্রাচীন ইতিহাসে অনেক সময়ই কাশ্মীরের উল্লেখ আছে শারদা-দেশ নামে। শারদা পীঠের কারণেই এই নাম বলে মনে করেন ঐতিহাসিকেরা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফফরাবাদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই পীঠ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই মন্দিরের উচ্চতা ১,৯৮১ মিটার।

০৪ ১১

৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দু’বছরের জন্য এই মন্দিরে ছিলেন চিনা পর্যটক এবং বৌদ্ধ পণ্ডিত হিউয়েন সাং। ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলহনের লেখা রাজতরঙ্গিনীতে শারদা পীঠকে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অষ্টম শতাব্দীতে বাংলা একটি পণ্ডিতদের দল এই মন্দিরে গিয়ে অধ্যয়ন করতেন বলে লেখা আছে রাজতরঙ্গিনীতে।

০৫ ১১

১০৩০ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন মুসলিম ঐতিহাসিক আল বিরুনি। এই মন্দিরে একটি শারদা দেবীর বিগ্রহ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এই মন্দিরকে তিনি মুলতানের সুর্যমন্দিরের সঙ্গে তুলনা করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে আকবরের নবরত্নের অন্যতম আবুল ফজলের লেখাতেও শারদা পীঠের উল্লেখ আছে।

০৬ ১১

আবুল ফজলের কথা অনুযায়ী এই মন্দির চত্বর পুরোটাই ছিল সোনার মোড়া। প্রতি মাসে পূর্ণিমার আট দিন পর এই মন্দিরে অলৌলিক ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তিনি। মধুমতী নদীর তীরে এই মন্দির বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এই মধুমতী নদীকেই এখন ডাকা হয় নীলম নামে।

০৭ ১১

চতুর্দশ শতাব্দী থেকে এই মন্দিরের ধ্বংসের শুরু। ইসলামি শাসনকালের শুরুতে এই মন্দিরে কোনও আঘাত আসেনি। কিন্তু চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রথম বারের জন্য মুসলিম হানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এই মন্দির। তার পর থেকেই মূল ভারত ভূখণ্ডের সঙ্গে এই মন্দিরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে।

০৮ ১১

উনবিংশ শতাব্দীতে এই মন্দির সারাতে কিছু উদ্যোগ নেন জম্মুর ডোগরা রাজা গুলাব সিংহ। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় পাশতুন উপজাতিদের দখলে আসে এই এলাকা। ফের বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় শারদা পীঠ। এখন এই মন্দির সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। কোনও বিগ্রহ নেই।

০৯ ১১

২০০৫ সালে কাশ্মীরের ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এক সময় উপমহাদেশের অন্যতম এই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। ২০০৭ সালে এই মন্দির দর্শন করতে চেয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান কাশ্মীরী পণ্ডিতদের একটি দল। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে পাক সরকার।

১০ ১১

কাশ্মীরী পণ্ডিতরা এখন আর এই পীঠ দর্শন করতে পারেন না। তাই সারদা পীঠ সংলগ্ন গ্রামের মুসলিম অধিবাসীরা কিছু দিন আগে এই মন্দির চত্বরের মাটি সংগ্রহ করে পাঠিয়ে ছিলেন কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কাছে। হিংসা আর সন্ত্রাস বিদীর্ণ কাশ্মীরে এই সৌজন্যতা আর ভ্রাতৃত্বতার এই নজির বুঝিয়ে দিয়েছিল মানবিকতা এখনও হারিয়ে দিতে পারে বিভাজনের রাজনীতিকে।

১১ ১১

কাশ্মীরী পণ্ডিতদের আবেগের বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি এই মন্দির নতুন করে তৈরির দাবি তুলেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা। করতারপুর করিডর খুলে যাওয়ার পর অনেকেই আশাবাদী, হয়তো পাক সরকার এই মন্দির সারাতে নতুন করে উদ্যোগ নিতেও পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement