ছবি: সংগৃহীত।
কোথাও থানায় থানায় সশস্ত্র হামলা, কোথাও গ্রেনেড বিস্ফোরণে রেলের লাইন উড়িয়ে দেওয়া, আবার কোথাও বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তাঁদের পরিচয় দেখে দেখে গুলি করা। পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ জুড়ে গত কাল রাত থেকে এ ভাবেই তাণ্ডব চালাল জঙ্গিরা। অন্তত তিনটি পৃথক জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে মোট ৪০ জনের। আহত অনেকে। পাক নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে ২১ জন জঙ্গির মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এখনও বালুচিস্তানের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি দমন অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে নিহত জঙ্গির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
একটি প্রথম সারির পাকিস্তানি দৈনিক জানিয়েছে, গত কাল গভীর রাতে কালাট, মাশতুঙ্গ, পাসনির মতো এলাকার বিভিন্ন থানায় হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। নিশানা করা হয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের। কোথাও থানার সামনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য গাড়ি। গ্রেনেড বিস্ফোরণের খবর মিলেছে সিবি, পাঞ্জগুড়, তুরবাত, বেলা, কোয়েটার মতো এলাকা থেকে। মাশতুঙ্গ বাইপাস এলাকার কাছে পাকিস্তান এবং ইরানের সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী রেললাইনের একাংশ শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কালাটের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গত কাল রাতভর জঙ্গি তাণ্ডবের জেরে সেখানে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৬ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও। কালাট পুলিশের সহকারী কমিশনার আফতাব লাসি জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে গুরুতর জখম হয়েছেন। একই ভাবে বোলানে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে জঙ্গিরা মেরে ফেলেছে অন্তত ৮ জনকে। বন্দর শহর গ্বদরের একটি থানায় হামলা চালিয়ে প্রচুর অস্ত্র ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গিরা। কোয়েটা-করাচি হাইওয়েতে গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পর পর জঙ্গি হামলার জেরে বালুচিস্তানের বিভিন্ন হাসপাতালে উপচে পড়ছে মৃতদেহের সারি। আজ সকালে আবার মুসাখাইল জেলার রারাশাম এলাকার আন্তঃপ্রাদেশিক হাইওয়েতে ট্রাক এবং বাস থেকে নামিয়ে বেছে বেছে মোট ২৩ জন যাত্রীকে গুলি করে মেরেছে জঙ্গিরা। বাস এবং ট্রাক থেকে যাত্রীদের নামানোর পরে তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয় জানতে চায় জঙ্গিরা। এর পরে পঞ্জাব প্রদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গুলি করে মারে তারা। বালোচ লিবারেশন আর্মি নামে বালুচিস্তানে সবচেয়ে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
কিছু দিন আগেই মুসাখাইলের হাইওয়ে ব্যবহার নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল জঙ্গিরা। তার পরে আজ সকালে এই হত্যালীলা চালায় তারা। মুসাখাইলের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজিব কাকার নিরীহ যাত্রীদের মৃত্যুর কথা বললেও জঙ্গিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাধারণ পোশাকে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যদেরই বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে।