ক্যানসার থাবা বসিয়েছিল দু’বার। প্রথম বার সেই অসুখ জয়ও করে ফেলেছিলেন। শেষেরটায় নিজেই বুঝতে পারছিলেন হেরে যাবেন। তাই চিকিৎসাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এক রকম স্বেচ্ছামৃত্যুর পথে পা বাড়িয়েছিলেন। দু’দিন আগে পরিবারের তরফে একটি বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়েছিল। তার ঠিক এক দিনের মাথায় মারণ রোগের কাছে হার মানলেন তিনি।
জন সিডনি ম্যাকেন থ্রি। ছ’বারের অ্যারিজ়োনার সেনেটর মারা গেলেন গত কাল বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। বয়স হয়েছিল ৮১। নিজের স্মৃতিকথায় লিখে গিয়েছেন, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ভাবনাটাকে তিনি ঘৃণা করেন। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। নিজের জীবন নিয়ে তাঁরই উপলব্ধি, ‘‘যুদ্ধ করেছি। শান্তি স্থাপনেও ভূমিকা নিয়েছি। জানি, আমেরিকার কাহিনিতে একটা ছোট্ট জায়গা আমি করে নিতে পেরেছি।’’
ওয়াশিংটনের পাট চুকিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে অ্যারিজ়োনার একটি বাড়িতে থাকছিলেন রিপাবলিকানদের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় এই নেতা। টিভি স্টুডিয়ো আর সেনেটের বারান্দায় দেখা যাচ্ছিল না পরিচিত মুখটাকে। ম্যাকেন চেয়েছিলেন, শেষের সময়টুকু শুধু মাত্র পরিবার-পরিজন আর কাছের লোকেদের সঙ্গে সময় কাটাতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ম্যাকেন আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, তিনি চান না, তাঁর শেষকৃত্যে দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকুন। তাঁর দুই পারিবারিক বন্ধু অবশ্য আজ সে কথাই নিশ্চিত করেছেন। তবে ম্যাকেনের মৃত্যুতে টুইট করে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ট্রাম্প। শোক প্রকাশ করেছেন এক সময় তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে শুরু বারাক ওবামা-ও।
১৯৩৬ সালের ২৯ অগস্ট জন্ম ম্যাকেনের। তাঁর পরিবারের সকলে ছিলেন মার্কিন নৌসেনার সদস্য। তিনি নিজেও এক সময় মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য ছিলেন। দু’বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ছিলেন ম্যাকেন। দু’বারই পরাজিত হন। ২০০৮ সালে তাঁকে হারান বারাক ওবামা। তবে তার জন্য ওবামার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনও নষ্ট হয়নি। যদিও ওবামার বিদেশ নীতির কড়া নিন্দা করতে পিছপা হননি কখনও। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় পাঁচ বছর বন্দি ছিলেন হ্যানয়ে। সেখানকার অত্যাচার কখনও ভুলতে পারেননি বলেই ৯/১১-র পরে সিআইএ যখন সন্দেহভাজন জঙ্গিদের মুখ থেকে তথ্য বার করার জন্য চরম অত্যাচার শুরু করেছে, তার কড়া সমালোচনা করেছিলেন ম্যাকেন। তিনিই আবার পরে ভিয়েতনামের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ম্যাকেনের বিমান গুলি করে নামায় বিপ্লবীরা। সেখানকার অত্যাচার ভোলেননি ম্যাকেন। ২০০৮ সালে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘যখন অন্য দেশের জেলে বন্দি হলাম, তখনই নিজের দেশের প্রেমে পড়লাম।’’ হ্যানয়ের কাছে যে জায়গায় ম্যাকেনদের বিমানগুলি নামানো হয়েছিল, এখন সেখানে তৈরি হয়েছে স্মৃতি-সৌধ। আজ সেখানেই প্রয়াত সেনেটরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দিয়ে এসেছেন ভিয়েতনামে বসবসাকারী কিছু মার্কিন নাগরিক। তাঁদেরই এক জন, রবার্ট গিব বললেন, ‘‘এখানে ফুল না দিয়ে আজ থাকতে পারলাম না।’’