—ফাইল চিত্র।
শ্বেতশুভ্র হংসের ডানা পেরিয়ে এসেছে অতলান্তিক সমুদ্র। ক্রয়ডন বেঙ্গলি কানেকশান (সিবিসি) এখন তার ডানা মেলেছে দূর দূরান্তরে। আমাদের পরিবার বেড়েছে ক্রয়ডন পেরিয়ে দক্ষিণ লন্ডনের শহরতলি ছাড়িয়ে সারা লন্ডনেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হচ্ছে প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি স্কুলের গন্ডি। আমরা হেসে খেলে বাড়ছি ওই ছটফটে ড্যাফডিলের মতো।বসন্তের হাওয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে সে যেমন তার উজ্জ্বল উপস্থিতি সকলকে জানান দেয়, সিবিসি-ও তাই। ক্রয়ডনে তার উপস্থিতি যেন এক উজ্জ্বল আলো। যেখানে পড়ে সেটাই আলোয় আলো হয়ে যায়। বিদেশ বিভুঁইতে ক্রয়ডন বেঙ্গলি কানেকশান আমাদের জুড়ে রেখেছে এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে।
সরস্বতী পুজো এমনই আমাদের এক অমোঘ আত্মপরিচয়। এভাবেই আট বছর আগে এক শীতল সন্ধ্যায় আমরা সকলে মিলে হাতে হাত মিলিয়ে চলার অঙ্গীকার করেছিলাম। ভাঙাগড়ার খেলা থেকে আমরাও রেহাই পাইনি তবু নিভৃতবাসিনী বীণাপানি আমাদের মিলিয়ে দেন প্রতিবছর নিয়ম করে। আমরা ভাষাদেবীর বন্দনায় মুখর হই, কবিতা পড়ি, গান গাই। প্রতি বছর আমাদের পুজোয় হাতেখড়ি দেওয়া হয়, কচিকাঁচাদের লেখাপড়ায় দীক্ষা দেওয়ার আমরা বাঙালি হয়ে বাঁচি, খাই দাই ভালবাসি। জোড়া ইলিশ বা গোটা সেদ্ধর গন্ধে মাতোয়ারা হই। স্কুল কলেজের নস্টালজিয়ার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। নদীর ওপারে সর্বসুখ আছে এই কথা ভেবে আবার কাজে মন দিই।
মা সরস্বতী ঢাল তরোয়াল নিয়ে চলে আসেন বছর বছর। ঢাল তরোয়াল মানে বৃষ্টি আর বরফ। কিন্তু আমরা সাজিয়ে রাখি কৃসান্থিমাম, গাঁদা, ডালিয়ার সম্ভার।ইন্ডিয়ান শপ থেকে আসে গঙ্গাজল, ধান-দুব্বো গঙ্গামাটি অবধি, মাটির দোয়াত কলমও কে জানি এনে দিয়েছিল দেশ থেকে। কুল আসে বটে তবে সে আফ্রিকান কুল, কি যেন একটা বেরী বলে ডাকে তাকে এখানকার লোকে। তারা তো জানেনা এই কুল পরীক্ষায় পাশফেল এ কত্ত বড় ভূমিকা রাখে। আপাত নিরীহ ফলটি মারাত্মক ক্ষমতার অধিকারী। তবে ছেলেপুলেদের এত কুলের দিকে নজরও নেই বটে। আমরা ফল প্রসাদে সাজিয়ে দিই কুলের থালা।
আরও পড়ুন: এই শহরের কোনও রাস্তার নাম নেই, কেন জানেন?
আরও পড়ুন: করিনার কোন জিনিস তৈমুরের অপছন্দ?
মা সরস্বতীর পুজো আর চাঁদা চাইবনা তা কি হয়?স্মৃতি উস্কে দেয় চাঁদা কথাটা। বাড়ির কত্তা চশমার আড়াল থেকে জিজ্ঞেস করতেন সরস্বতী বানানটা কর তো দেখি বাছা। এখানে অবশ্য কর্পোরেট স্টাইলে সব কিছু—এই চাঁদা সংগ্রহের কাজেও আমরা হাতে হাত রেখে এগিয়ে পড়ি। মিলে সুর মেরা তুমহারা— সকলে মিলে সুর মেলানও একটা বড় কাজ বটে। সিম্ফনী বাজে, কনফারেন্স কলে, চাঁদার হাজিরায়, রিহার্সালে, ভোগের আয়োজনে, আরতিতে— সবেতেই।
সুরে সুর মিলিয়েই ছাপা হয় আমাদের স্যুভেনির বেণুবীণা— এবারেও। ক্রয়ডন আর মা সরস্বতীই থাকে শুধু সত্যি হয়ে, আর বাকি সব বদলায়।