এক জনের পরনে হাল্কা গোলাপি শাড়ি। অন্য জনের হাল্কা পুদিনা-সবুজ লেহঙ্গা। সঙ্গে মানানসই গয়না। স্বচ্ছ ছাতার তলায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তে একাত্ম দুই সখী।
শুধু সখী নয়, তাঁরা দু’জন জীবনসঙ্গী। পাকিস্তানের শিল্পী সুন্দস মালিক এবং ভারতের অঞ্জলি চকরা। দু’জনের সংসার নিউইয়র্কে। উত্তর পাকিস্তানের মেয়ে সুন্দসের সঙ্গে অঞ্জলির আলাপ নিউইয়র্কেই। প্রথম দর্শনেই ভাল লাগা, তার থেকে প্রেম। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে প্রথম হাত ধরা থেকে প্রথম চুম্বন, দু’জনে মনে রেখেছেন প্রতিটা বিশেষ মুহূর্ত।
সমকামী সুন্দস এবং অঞ্জলির একসঙ্গে পথ চলার এক বছর হয়ে গিয়েছে। সেই উপলক্ষে ফোটোশুট করেছেন দুই তরুণী। সোশ্যাল মিডিয়া আপাতত বুঁদ তাঁদের ছবিতে। ভালবাসার ছবি ভেসে গিয়েছে ৪১ হাজারেরও বেশি ‘লাইক’ এবং অসংখ্য কমেন্টে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে স্বচ্ছ ছাতার নীচে দুই তরুণীকে। একটি ছবিতে তো দু’জনে মগ্ন গভীর চুম্বনে। নেটিজেনরা কিন্তু অশালীনতা খুঁজে পাননি। বরং, জীবনসঙ্গীকে নিঃশর্ত ভাবে ভালবাসার অঙ্গীকার খুঁজে পেয়েছেন।
আর খুঁজে পেয়েছেন দু’দেশের সীমান্তের বেড়াজাল ভাঙার অনন্য নজির। ভারত-পাকিস্তান মানেই যে শুধু রক্ত আর বারুদের গন্ধ নয়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন সুন্দস-অঞ্জলি। বলছেন নেটিজেনরা।
উজান স্রোতে পাড়ি দেওয়া দুই তরুণীকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। তাঁদের লেহঙ্গা, মানানসই ভারী গয়নায় দু’দেশের সংস্কৃতিও সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে, অনেকেই লিখেছেন কমেন্ট-বক্সে।
এক সঙ্গে থাকার বর্ষপূর্তিই শুধু নয়। সম্প্রতি এই দম্পতি যোগ দিয়েছিলেন বেশ কিছু পারিবারিক বিয়ের উৎসবে। দু’জনেই সচেষ্ট ছিলেন দু’জনের পরিবারের সদস্যদের মন জয় করতে।
অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে একে অন্যকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুন্দস এবং অঞ্জলি। যুগলের ছবি পোস্ট করে অঞ্জলি লিখেছেন, সুন্দস-ই সেই মেয়ে যিনি তাঁকে শিখিয়েছেন কী ভাবে ভালবাসতে হয় আর কী ভাবে ভালবাসা পেতে হয়। সুন্দসের কথায়, অঞ্জলি আগের জন্মেও তাঁর আপনজনই ছিলেন।
সুন্দস-অঞ্জলির ফোটোশুট যিনি করেছেন, সেই ফোটোগ্রাফার সরোওয়র আহমেদও আপ্লুত। তিনিও দু’জনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবির সিরিজ পোস্ট করে তার নাম দিয়েছেন ‘এ নিউ ইয়র্ক লভ স্টোরি’।
তাঁদের দু’জনকে দু’জনের ‘জীবনসঙ্গী’ বলা হবে, নাকি ‘জীবনসঙ্গিনী’, তা নিয়ে ভাবিত নন এই দুই তরুণী। তাঁরা শুধু চান বাকি জীবনটাও এ ভাবে ভালবাসার তরীতে পাড়ি দিতে। একে অন্যের ‘বেটার হাফ’ হয়ে। তাঁদের দেখে মানবতার প্রেমে পড়েছেন নেটিজেনরা।
ভারত পাকিস্তান মানেই হিন্দু-মুসলিম বিভাজন বা প্রতিহিংসার রক্ত নয়। দম্পতি মানেই নারী পুরষ নয়। এরকমই অনেকগুলো ‘হ্যাঁ’-কে ‘না’, আর ‘না’-কে ‘হ্যাঁ’ করে বাজিমাত দুই তরুণীর। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া