রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভেঙে পড়েছে ওডেসার ট্রান্সফিগারেশন ক্যাথিড্রালের একাংশ। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।
এক বার স্ট্যালিন। এক বার ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৩৬ সালে বলশেভিক আন্দোলনের সময়ে বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ওডেসার ট্রান্সফিগারেশন ক্যাথিড্রাল। ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর (১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল) গির্জাটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। ফের ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল সেই অর্থোডক্স গির্জা। গত কাল, ২২ জুলাই রাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ল এই ঐতিহাসিক স্থানে। ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা দাবি করেছেন, দেশের অর্থোডক্স গির্জাগুলিকে এক এক করে পরিকল্পনামাফিক ভাবে ধ্বংস করছে রাশিয়া।
কাল সারা রাত ধরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলে ওডেসায়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হয়েছে। চারটি ক্যালিবর ক্ষেপণাস্ত্র ও পাঁচটি ইসকান্দর-কে ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামানো হয়েছে। ছ’টি আবাসন ধ্বংস হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ২২ জন জখম। ৪টি বাচ্চা রয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, ওডেসার ট্রান্সফিগারেশন ক্যাথিড্রালে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে। গির্জার ভগ্নস্তূপের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কিভ সরকার। রুশ সেনাবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে তাদের টুইটে, ‘ঈশ্বর ওদের ক্ষমা করে দাও, কারণ আমরা করব না।’
ইউক্রেনের অন্যত্রও আজ দিনভর হামলা চলেছে। আজ সকালে চ্যাসিভ ইয়ারে গোলাবর্ষণ করে রুশ সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাখমুট শহরের পশ্চিমে ডনেৎস্ক অঞ্চলে এই শহর। ইউক্রেনের দাবি, চ্যাসিভ ইয়ারে ক্লাস্টার বোমা ফেলেছে রাশিয়া। রুশ বোমায় আগুন ধরে যায় ‘প্যালেস অব কালচার’-এ। প্রাসাদটি এখন মানবাধিকার কমিশনের দফতর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এই হামলায় কোনও হতাহতের খবর নেই।
আজ সেন্ট পিটার্সবার্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন তাঁর বন্ধু, বেলারুসের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো। তাঁরা সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে কোটলিন আইল্যান্ডের ক্রনস্টাডে যান। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধপর্বের গোটা সময়টা রাশিয়ার পাশে থেকেছে বেলারুস। বস্তুত, ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুই করেছিল রাশিয়া বেলারুসের মাটি ব্যবহার করে। ওয়াগনার বিদ্রোহ থামাতেও বেলারুস সাহায্য করেছে রাশিয়াকে। গত কাল পুতিন বলেন, বেলারুসের হামলার অর্থ তাঁদের উপরে হামলা চালানো। যুদ্ধের সাফল্য ও অন্যান্য কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন ‘দুই বন্ধু’। যদিও আজ আমেরিকা দাবি করেছে, বর্তমানে বেশ চাপে রয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে দখল করা জমির ৫০ শতাংশ তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কিভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, ওডেসারও ‘জবাব’ মিলবে। তিনি টুইট করেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ শহর, আবাসন, গির্জায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ওরা... এর কোনও অজুহাত হতে পারে না। সব সময় দুষ্টেরই দমন হয়। ওডেসার জবাবও পাবে রুশ সন্ত্রাসবাদীরা।’’