উত্তপ্ত বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।
ঢাকা শহরে চার থেকে ছয় লক্ষ রিকশা চলে। রক্তক্ষয়ী ছাত্র আন্দোলন ও তার পরে কার্ফুর দিনগুলিতে তাঁদের রোজগার মার খেয়েছে প্রবল ভাবে। কিন্তু ঢাকার রিকশাওয়ালারা অনেকেই ঘরে বসে থাকেননি। তাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন, সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছেন, নিজেদের বাঁচিয়েছেন এবং সর্বোপরি বাঁচিয়েছেন আন্দোলনকারীদের অনেককেও।
যেমন, মেহেন্দিগঞ্জের স্বপন। ঢাকার বনশ্রী এলাকায় বুলেটে জখম এক যুবকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনিই। প্রবল রক্তক্ষরণ হচ্ছিল ওই যুবকের। স্বপন তাঁর রিকশায় তাঁকে গোরান টেম্পো রোড অবধি পৌঁছে দিয়ে যুবকের সঙ্গীদের বলেন একটা অটো ধরে দ্রুত হাসপাতালে যেতে। রিকশা নিয়ে যেতে গেলে সময় অনেক বেশি লাগবে। বনশ্রী থেকে গোরান টেম্পো রোড অবধি যাওয়ার জন্য কোনও ভাড়া নেননি তিনি। মহম্মদপুরের কাশেম ১৯ তারিখ তাঁর রিকশায় আহতদের নিয়ে অন্তত পাঁচ বার হাসপাতাল গিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিবাদীদের হাতে লাঠি আর পাথর ছিল। পুলিশের ছিল বুলেট। অজস্র মানুষকে চোখের সামনে জখম হতে দেখেছি। তাদের হাসপাতাল নিয়ে যাওয়াটাই আমার কাজ বলে মনে করেছি।’’ জাহাঙ্গির নামে আর এক জন রিকশাচালক আন্দোলনের সময় টানা তিন দিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা চালিয়েছেন। ‘‘মনে হচ্ছিল মুখটা পুড়ে যাচ্ছে’’, বলেছেন তিনি। কথা বলতে গিয়ে কুমিল্লার শাহিনের গলা এখনও কেঁপে যায়। পুলিশ বনাম ছাত্রদের সংঘর্ষের মধ্যে কী ভাবে রিকশা বাঁচিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পেরেছিলেন, সে কথা ভাবলে এখনও দুঃস্বপ্নের মতো লাগে। ধেয়ে আসা টিয়ার গ্যাসের শেল থেকে রিকশাচালকেরা সকলেই একটা বিষয়ে একমত— প্রাণভয়ে বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ তাঁদের ছিল না। অন্নসংস্থানের জন্য রাস্তায় বেরোতেই হত। তাতে লাভ কতটুকু হয়েছে? দিনে ৮০০-১০০০ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা) যেখানে রোজগার হয় এমনিতে, সেখানে সংঘর্ষ এবং সংঘর্ষোত্তর কার্ফু কবলিত দিনগুলিতে মিলেছে ১৫০-২০০ টাকা।
আশার কথা এই যে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। আগামী তিন দিন (২৮ থেকে ৩০ জুলাই)সরকারি-বেসরকারি অফিস ছয় ঘণ্টা করে চলবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে। ছুটির অন্যান্য শর্ত আগের মতোই থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। অর্থাৎ জরুরি পরিষেবার কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন। অন্য দিকে, বিরোধী দল বিএনপি তাদের বিবৃতিতে জামাত-ই-ইসলামিকে সঙ্গে নিয়েই সরকার ফেলার ডাক দিয়েছে। এই প্রয়াসে বাম-ডান সব দলকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি-র এই আহ্বানকে ‘দেশবিরোধী অপশক্তির ঐক্য’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধের বিরোধী।