কোস্টা রিকা উপকূলের কাছে সমুদ্রের গভীরে অক্টোপাসের বাসা। ছবি: শ্মিট ওশেন ইনস্টিটিউট।
কোস্টা রিকা উপকূলের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশ থেকে প্রায় দু’মাইল, (অর্থাৎ ৩.২ কিলোমিটার) নীচে তাদের বসবাসের কথা এত দিন জানাই ছিল না কারও। সম্প্রতি সমুদ্র বিজ্ঞানীরা সন্ধান পেয়েছেন অক্টোপাসের সেই অজানা সংসারের। গত মাসে তিন সপ্তাহের জন্য সমুদ্র অভিযানে বেরিয়েছিলেন ২০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল। তখনই খোঁজ মিলেছে। ততক্ষণাৎ অঞ্চলটির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে তৎপর হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিজ্ঞানী মহল।
এই আবিষ্কারের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে ‘শ্মিট ওশেন ইনস্টিটিউট’-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর জ্যোতিকা বিরমানি বলেছেন, ‘‘সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮০০ মিটারেরও বেশি গভীরে একটি অক্টোপাসের নার্সারির সন্ধান মিলেছে। সমুদ্র সম্পর্কে এখনও আমাদের কত কিছু জানার রয়েছে।’’
গবেষণার জন্য তৈরি বিশেষ জলযান ‘ফ্যালকর’-এ চেপে সমুদ্রের গভীরে গিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যাত্রাপথে তাঁরা ‘ডোরাডো আউটক্রপ’ নামে একটি বিশেষ পাথুরে স্থান দেখতে পান। ২০১৩ সালে ওই জায়গায় বিজ্ঞানীরা অক্টোপাসের ডিম দেখেছিলেন। বুঝেছিলেন জায়গাটি অক্টোপাসের ডিম পাড়ার জায়গা। এ রকম দৃশ্য তার আগে কখনও দেখেননি বিজ্ঞানীরা। তবে সে বারে সবটা স্পষ্ট ছিল না। অঞ্চলটি অক্টোপাসের বংশবৃদ্ধির জন্য কার্যকরী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কারণ গভীর সমুদ্রের অক্টোপাসেরা শীতল পরিবেশ পছন্দ করে। কিন্তু সমুদ্রের ওই স্থানে তুলনামূলক ভাবে তাপমাত্রা বেশি।
সাম্প্রতিক অভিযানে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, ‘ডোরাডো আউটক্রপ’ অক্টোপাসের সক্রিয় নার্সারি। অক্টোপাসের সন্তান হওয়াও পর্যবেক্ষণ করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এখানে অক্টোপাসের সংসার মূলত ‘মুসোক্টোপাস’ গণের। এরা আকারে ছোট থেকে মাঝারি মাপের। বিজ্ঞানীদের অনুমান, গণ জানা থাকলেও প্রজাতিটি নতুন কিছু হতে পারে।
সমুদ্রের এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় ছিল এত দিন। নিরাপত্তা নিয়ে তাই জোর দিতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। ‘ইউনিভার্সিদাদ দে কোস্টা রিকা’-র জীববিদ্যার অধ্যাপক জর্জ কোর্তেস নুনেজ় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষের কাছে সমুদ্র হল আর পাঁচটা জলভাগের মতোই। তাঁরা কল্পনাও করতে পারেন না সেখানে কী আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ কিলোমিটার নীচে সমুদ্রের তলদেশ। আমরা যা দেখতে পেয়েছি এই অভিযানে, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য একটা জগৎ।’’