বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বুধবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে বুধবার বাংলাদেশের রাজধানী শহরে পৌঁছেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তিনি নিয়ে গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ভবনের নিজস্ব পাকশালায় তৈরি হরেক রকমের মিষ্টান্ন, বাহারি কেক আর বিস্কুট। গত গ্রীষ্মে হাসিনার পাঠানো রংপুরের ঝুড়িভাঙা আমের সুস্বাদের ঢালাও প্রশংসাও করেছেন। তার মধ্যেও দুর্গাপুজোর সময়ে বাংলাদেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি মোকাবিলায় সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বলেন, “বাংলাদেশে আমরা কাউকে সংখ্যালঘু বলে মনে করি না। সব মানুষের সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছে সরকার।”
এ দিন সকালে বাংলাদেশ সময় সোয়া ১১টায় ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’ ঢাকায় পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ ও তাঁর স্ত্রী সবিতাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান সস্ত্রীক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আব্দুল হামিদ। মেয়ে স্বাতীও গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সঙ্গে। ২১ বার তোপধ্বনি ও সেনা বাহিনীর রাষ্ট্রীয় অভিবাদনের পরে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন এবং জাদুঘর পরিদর্শন করেন। সেখানে শেখ মুজিবের মুরালের সামনে ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি। এই বাড়িতেই অভ্যুত্থানকারী সেনাদের হাতে সপরিবার নিহত হয়েছিলেন মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা। মুজিবের দ্বিতীয়া কন্যা শেখ রেহানা রাষ্ট্রপতিকে বাড়ি ও জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখান।
মধ্যাহ্নভোজের পরে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন হোটেলে এসে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তার পরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোবিন্দের সঙ্গে তাঁর কথার সময়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সিনিয়র মন্ত্রীরা। ভারতীয় দলে ছিলেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এবং বিদেশ মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ অফিসারেরা। মুজিবুর রহমান জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। জানান, সেই ঝোড়ো সময়ে ইন্দিরা গাঁধী যে ভাবে তাঁদের দুই বোন এবং পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, সে কথা ভোলার নয়।
সন্ধ্যা ছ’টায় কোবিন্দ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাসভবন ‘বঙ্গভবন’-এ যান। সেখানে দুই রাষ্ট্রপতির মধ্যে আলোচনায় দু’দেশের বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রসঙ্গ ওঠে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা সহযোগিতা, স্থলসীমান্ত চুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ— এই সব ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ক অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে।” এর পরে সফরকারী রাষ্ট্রপতিকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন হামিদ। বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসে সুর্যোদয়ের সময়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলের স্তবক নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানাবেন দুই রাষ্ট্রপতি। বিকেলে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান। ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সরকার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন হয়েছে বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাব।