নওয়াজ শরিফ
শেষ পর্যন্ত গদি রাখতে পারলেন না নওয়াজ শরিফ। পানামা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নওয়াজ। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত নওয়াজ এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর কাছে পাঠাতেও নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত।
এ দিন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘‘আর্থিক দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্য নন। তিনি আইনসভার সদস্যপদের যোগ্যতাও হারিয়েছেন।’’ পাক অর্থমন্ত্রী ইশাক দার এবং মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন সফদারকেও পদে থাকার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে আদালত।
এই নিয়ে তৃতীয় বার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ক্ষমতা থেকে সরতে হল নওয়াজ শরিফকে। এ দিনের রায়ের পরেও প্রকাশ্যে সাহসী মুখই দেখাচ্ছে শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল)। বিরোধীদের উচ্ছ্বাসের পাল্টা হুঙ্কার দিয়েতারা বলেছে,‘‘শরিফ জমানা শেষ হয়নি এখনও।’’ পূর্ব-পরিকল্পনা মতো দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যে নওয়াজের ভাই শাহবাজ হচ্ছেন, সেই দিকেই জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছে পিএমএল।
আরও পড়ুন:বুলিই বিলিয়ে গেলেন শরিফ
পাকিস্তানে পরবর্তী নির্বাচন ২০১৮-তে। পদচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় দিন সাতেক আগেই একটি উচ্চ পর্যায়ের দলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন নওয়াজ। সূত্রের খবর, সেখানেই শাহবাজের নাম ওঠে। তবে পাক পঞ্জাবের শাসক শাহবাজ আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য না হওয়ায় এখনই তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ঠিক হয়েছে, নিয়ম মেনে নির্বাচনের মাধ্যমেই শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হবেন। মাঝের ৪৫ দিন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
২০১৫ সালে পানামা নথি প্রকাশ্যে আসার পরেই হইহই শুরু হয়। বহু দেশের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির গোপন সম্পত্তির ফাঁস হওয়া তালিকায় নাম ছিল পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের। অভিযোগ অস্বীকার না করলেও শরিফের দাবি, পারিবারিক ব্যবসা সূত্রেই বিদেশে ওই সব সম্পত্তির মালিক তাঁর দুই ছেলে হাসান, হোসেন ও মেয়ে মরিয়ম। তবে সেই যুক্তি উড়িয়ে তদন্ত চেয়ে গত বছর সুপ্রিম কোর্টে যায় প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। এ বছর এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, নওয়াজকে বরখাস্ত করা হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ মেলেনি বলেই এ কথা জানিয়েছিল আদালত। তবে অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করে তদন্তকারী দল জানিয়েছে, শরিফ পরিবারের যা উপার্জন, তার সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ও জীবনযাত্রার মান সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
রায়ের পরে মচকালেও ভাঙেননি শরিফ-কন্যা মরিয়ম। শুক্রবারই টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আজকের দিনেই ২০১৮-র নির্বাচনের জন্য পথচলা শুরু হল। নওয়াজ অদম্য। রোক সকো তো রোক লো!’’