কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রেডিডকে তাঁর গাড়ির ভিতর থেকে নিহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর। ফাইল ছবি
আট বছর আগে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে ৪৩ জন ছাত্রছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টা পরেই গুলি করে খুন করা হল এক সাংবাদিককে! দক্ষিণ মেক্সিকোর গুরেরো প্রদেশের রাজধানী চিলপানসিঙ্গোর এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশ জুড়ে।
২০১৪ সালে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে গুরেরো থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল একসঙ্গে ৪৩ জন পড়ুয়া। ঘটনার প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এই বিষয় নিয়ে রহস্যের সমাধান হয়নি। মেক্সিকোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির তালিকায় এই ঘটনা অন্যতম। সম্প্রতি সত্য কমিশন বিষয়টিকে ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মদতে ঘটানো স্টেট ক্রাইম’ তকমা দেওয়ায় তা ফের প্রচারের আলোয় ফিরে আসে।
এই বিষয়টি নিয়েই মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফেসবুকে একটি লম্বা পোস্ট লিখেছিলেন ফ্রেডিড রোমান নামে ওই নিহত সাংবাদিক। যার শীর্ষক— ‘স্টেট ক্রাইম উইদআউট চার্জিং দ্য বস’। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রেডিডকে তাঁর গাড়ির ভিতর থেকে নিহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর। যার পর ইঙ্গিতপূর্ণ ওই শীর্ষকটি বিশেষ নজর কেড়েছে নেটিজ়েনদের।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে লেখা ওই পোস্টে ৪৩ ছাত্রছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার সময়ে চার সরকারি আধিকারিক গোপন বৈঠক করেছিলেন বলে দাবি করেন ফ্রেডিড। যার মধ্যে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল জিসাস মুরিলো কারামও ছিলেন বলে লেখেন তিনি। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পরে গ্রেফতার করা হয়েছে মুরিলোকে। একই সঙ্গে সেনা, পুলিশ-সহ প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক এবং কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
যদিও ওই ফেসবুক পোস্টের জেরেই ফ্রেডিডকে খুন হতে হল, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে তাঁর আগের লেখা কোনও বিতর্কিত পোস্ট, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত এখনও দেননি পুলিশের তদন্তকারীরা। মেক্সিকো সরকারের তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছরে মেক্সিকোয় ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন মোট ১২ জন সাংবাদিক। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ (আরএসএফ)-এর তরফে দেশে খবর করতে আসা সাংবাদিকদের নিহতের তালিকা ৯ ছাড়িয়েছে। যদিও বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, সংখ্যাটা ৯ জনের অনেক বেশি। কম করে হলেও ১৫ থেকে ১৬ জন।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে মেক্সিকোর স্থান বরাবর নীচের দিকে। আরএসএফ-এর দাবি, ২০০০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫০ জন সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে সে দেশে।