PM Narendra Modi Jacket

মোদীর গায়ে প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি জ্যাকেট! দুনিয়াকে নতুন ‘ফ্যাশন’ শিক্ষা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর

হালকা ঘিয়ে রঙের জ্যাকেট। মোদী যে ধরনের ‘নেহরু কোট’ পরেন, তেমনই। তবে এই জ্যাকেটের বিশেষত্ব এর সুতোয়। রবিবার জাপানে আয়োজিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে হিরোশিমায় এই জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন মোদী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ১৬:১০
Share:

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ছবি : টুইটার।

কোথায় যাবেন, কী করবেন, সব কিছু মাথায় রেখে পোশাক বাছেন তিনি। লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা হলে ধবধবে সাদা চুড়িদার কুর্তা, সঙ্গে মাথায় তেরঙ্গা পাগড়ি। আবার অভয়ারণ্যে গেলে পরনে ‘ক্যামোফ্লাজ টি-শার্ট’, খাকি ট্রাউজার্স, সাফারি জ্যাকেট। বিদেশ সফরে ধূসর সোয়েটারের উপর টকটকে লাল মাফলার। কখনওবা চেকচেক জ্যাকেটের সঙ্গে গলায় স্কার্ফ, স্বচ্ছ কালো রোদচশমা চোখে। ভারতের ইতিহাসে আর কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এমন স্থান-কাল-পাত্র বেছে মন দিয়ে সাজগোজ করতে দেখা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই পোশাক দিয়ে কথা বলেছেন। বলিয়েছেন। যেমন রবিবারও বলালেন। জাপানে আয়োজিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মোদী হাজির হলেন প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা জ্যাকেট পরে।

Advertisement

লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মোদীর পাগড়ি। ছবি : টুইটার থেকে।

হালকা ঘিয়ে রঙের জ্যাকেট। মোদী যে ধরনের ‘নেহরু কোট’ পরেন, তেমনই। তবে এই জ্যাকেটের বিশেষত্ব এর সুতোয়। যে কাপড় কেটে তৈরি হয়েছে এই জ্যাকেট, সেই কাপড় তৈরি হয়েছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতলজাত সুতো দিয়ে। পানীয় জল থেকে শুরু করে নরম পানীয় কিংবা ফলের রস বাজারজাত করতে প্লাস্টিক বোতলে ভরা হয়। কিন্তু ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল থেকে তৈরি হয় বিপুল প্লাস্টিক আবর্জনা। যা পরিবেশ দূষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন করছে বলে দুশ্চিন্তায় জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। মোদী ভক্তরা বলছেন, বিশ্বমঞ্চে স্রেফ ফ্যাশনেই এই সমস্যার সমাধান বাতলে দিলেন মোদী। বোঝালেন, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্বব্যহার করে পোশাকও বানানো যায়। যা জলবাযু পরিবর্তনের সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারে।

Advertisement

কর্নাটকের বান্দিপুর অভয়ারণ্যে। ছবি : টুইটার থেকে।

রবিবার জাপানে আয়োজিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে হিরোসিমার শান্তি স্মারক সংগ্রহশালায় গিয়েছিলেন মোদী। যে হিরোশিমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা, সেখানেই এই স্মারক সংগ্রহালয় তৈরি করেছে জাপান সরকার। মোদী সেখানেই ওই জ্যাকেট পরে যান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘ভারতীয়দের একই জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহারের অভ্যাস দীর্ঘদিনের। এই অভ্যাস আমাদের মূল্যবোধ আর সংস্কৃতিতেও স্পষ্ট দেখা যায়। ভারত যে পথে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজায়নের পথে এগোচ্ছে যে ভাবে শক্তি রূপান্তর করছে তা আসলে আমাদের সেই ভারতীয় মূল্যবোধেরই প্রতিফলন।’’

সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য নিজের বাসভবনের বাগানে । ছবি : টুইটার থেকে।

তবে জ্যাকেট প্রসঙ্গে সরাসরি না বললেও মোদীকে বলতে শোনা যায় বললেন, ‘‘পুনর্ব্যবহারেই লুকিয়ে আছে উন্নয়নশীল দেশগুলির সাফল্যের চাবিকাঠি। আজ এখানে তার প্রমাণও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি উর্দিও আপনারা দেখেছেন। সেগুলো ফ্যাশন বা সৌন্দর্যে কোনও দিক দিয়ে কম নয়। প্রতি বছর এমন ১০ কোটি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল পুনর্ব্যবহারের লক্ষ্যস্থির করেছি আমরা। যা পরিবেশ বাঁচাতে সাহায্য করবে।’’

সোনার জরি দিয়ে মোদীর নাম লেখা ছিল তাঁর স্যুটে। বরাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতে ওই পোশাক পরে চমকে দিয়েছিলেন মোদী। ছবি : টুইটার থেকে।

মোদীর ওই জ্যাকেট বিদেশেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলেছেন, যে হিরোশিমায় পরমাণু বিস্ফোরণ পরিবেশের স্থায়ী ক্ষতি করেছিল, সেখানে পরিবেশ বাঁচানোর এই জ্যাকেট পরে যাওয়া আলাদা তাৎপর্যবাহী।

অবশ্য মোদী এই প্রথম এই ধরনের প্লাস্টিকের বোতলকে পুনর্বব্যহার করে তৈরি জ্যাকেট পরলেন তা নয়। সম্প্রতি সংসদেও মোদী এমনই একটি আকাশি রঙের নেহরু জ্যাকেট পরে হাজির হন। সেই জ্যাকেটটিও ছিল প্লাস্টিক বোতলকে পুনর্ব্যবহার করে তৈরি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের শক্তিসপ্তাহ বা ইন্ডিয়া এনার্জি উইক চলাকালীন জ্যাকেটটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছিল ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন।

এই ছবিটি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে। মোদী তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। ছবি : টুইটার থেকে।

রবিবার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আবার সেই রকমই একটি জ্যাকেট পরে এলেন মোদী। তিন দিনের সফরে শনিবারই জাপানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সফরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement