প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
চিনের ভৌগোলিক নজিরকে অনুক্ত রেখে জি২০ শুরুর ঠিক আগে জাকার্তা থেকে কঠোর বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত-আসিয়ান বৈঠক-মঞ্চ থেকে তাঁর বক্তব্য, সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রত্যেকের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
এক সপ্তাহ আগেই চিন তার রাষ্ট্রীয় মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে দেখানো হয়েছে চিনের ভূখণ্ড হিসাবে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর পরেও নরম হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি শি জিনপিং সরকারের। কোনও কারণ না দেখিয়েই জি২০-শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছেন শি।
সব মিলিয়ে জি২০-র পূর্বাহ্নে এই ধরনের তিক্ততার মধ্যে স্পষ্ট, মোদী পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আজ চিন-বিরোধী স্বর চড়াতে চেয়েছেন। এই দেশগুলির অধিকাংশ চিনের সম্প্রসারণবাদের বিরোধিতা করেছে প্রকাশ্যে, ফলে মোদীর পক্ষেও ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “এখন সব চেয়ে যেটা প্রয়োজন তা হল এমন একটি মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরি করা, যেখানে সব দেশের জন্য একই আন্তর্জাতিক আইন বলবৎ হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের সমুদ্র আইনকে যেন সমান ভাবে সবাই মানে। সবার সুবিধার জন্য আইন মোতাবেক বাধাহীন বিমান এবং নৌ বাণিজ্যের স্বাধীনতা থাকে।” মোদীর কথায়, “ভারত মনে করে, দক্ষিণ চিনা সাগরে আচরণবিধি প্রয়োগ হওয়া উচিত।”
ভারত-আসিয়ান বৈঠকের পরেই বসে পূর্ব এশিয়া সম্মেলন। সেখানে আসিয়ান সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চিন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা। এই সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্নে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে ঘিরে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের পাশাপাশি ভূকৌশলগত সংঘাত সবার জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। এর মোকাবিলা করার জন্য বহুপাক্ষিক আইনের শাসন মানা আন্তর্জাতিক বিধি ও ব্যবস্থা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা প্রয়োজন। সমস্ত দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেকের প্রতিশ্রুতি এবং প্রয়াস অবশ্যই জরুরি।”
আজ তাঁর বক্তৃতায় আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্কের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, ইতিহাস এবং ভূগোলই ভারত ও আসিয়ানকে এক করে রেখেছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় মোদী বলেন, তাঁর সরকারের 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি' প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। মোদীর কথায়, এ বছরের শীর্ষ সম্মেলনের থিম হচ্ছে বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু। আসিয়ান- কে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু বলে মন্তব্য করেন তিনি। মনে করিয়ে দেন, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নে আসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের দক্ষিণের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।