ছবি: সংগৃহীত।
ভিসুভিয়াসের ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে ছিল প্লেটোর মৃত্যুকাহিনি। প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো একটি প্যাপিরাসের পাঠোদ্ধার করে গবেষকেরা গ্রিক দার্শনিকের শেষের কয়েক দিনের সেই ইতিবৃত্ত উদ্ধার করে আনলেন।
৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হারকিউলেনিয়াম ও তার পার্শ্ববর্তী পম্পেই-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে সেখানে দফায় দফায় খননকাজ চলেছে। ছাই ও জমে যাওয়া লাভা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে পম্পেই ও হারকিউলেনিয়ামের অনেকটা অংশ। এবং জানা গিয়েছে সেই সময়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে নানা তথ্য।
হারকিউলেনিয়ামের ‘ভিলা অব প্যাপিরাই’ নামের একটি গ্রামে প্যাপিরাসের লাইব্রেরি ছিল। ১৭৫০ সালে সেটি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কথিত, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজ়ারের শ্বশুরমশাই সেই প্যাপিরাস লাইব্রেরির মালিক ছিলেন। এই লাইব্রেরি থেকে ১৮০০-রও বেশি প্যাপিরাস-পুঁথি উদ্ধার হয়। গরম ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে থাকার ফলে অধিকাংশ প্যাপিরাস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন সেই সব প্যাপিরাসের পাঠোদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে।
সম্প্রতি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রানৎজ়িয়ানো রানোচিয়া নেপলসের জাতীয় গ্রন্থাগারে সেই ভিলা থেকে পাওয়া এক খণ্ড প্যাপিরাস নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, এই প্যাপিরাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর জীবনকাহিনি। বিশেষ করে তাঁর জীবনের শেষ সন্ধের কথা। অধ্যাপক রানোচিয়া জানান, সেই সন্ধ্যায় বীণা শুনছিলেন দার্শনিক। বাঁশি বাজাচ্ছিলেন এক ক্রীতদাসী। জ্বরে কাবু প্রায় অশীতিপর প্লেটো বাঁশি শুনতে শুনতে একবার ‘ছন্দপতনের’ জন্য মেয়েটিকে ভর্ৎসনাও করেন বলে লেখা রয়েছে প্যাপিরাসে।
প্যাপিরাসে সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে প্লেটোর সমাধিস্থলের কথাও। এত দিন শুধু অনুমান করা হত যে, প্লেটোর স্থাপন করা বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘অ্যাকাডেমি অব আথেন্স’-এর বাগানে শায়িত রয়েছে তাঁর দেহ। কিন্তু হারকিউলেনিয়াম থেকে পাওয়া প্যাপিরাসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেখানেই প্লেটোকে সমাহিত করা হয়েছিল।
অধ্যাপক রানোচিয়া জানিয়েছেন, প্যাপিরাস পাঠোদ্ধারের কাজ সবে শুরু হয়েছে। তাঁরা আশা করেন, আরও অনেক অজানা তথ্য উদ্ধার করা যাবে।