প্রতীকী ছবি।
উৎসবের দিনে ঘরবন্দি অর্ধেক বিশ্ব। সৌজন্যে করোনার ওমিক্রন স্ট্রেন। ব্রিটেনে গড় দৈনিক সংক্রমণ লাখখানেক। রাজধানী লন্ডনে প্রতি ২০ জনের মধ্যে এক জন করোনা-আক্রান্ত। ফ্রান্সেও লাখ ছুঁইছুঁই। সংক্রমণ বাড়ছে ইটালিতে। ভয়ে আমেরিকা। ইউরোপের পরেই হয়তো সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়বে সে দেশে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ‘‘ঢেউ নয়, সুনামি আনবে ওমিক্রন।’’
বছরের শেষ সপ্তাহে, বড়দিন থেকে নববর্ষের লম্বা ছুটিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন প্রায় সকলেই। দেশে-বিদেশে বেড়াতে যান। এ রকমই এক উৎসবের পড়ে আমেরিকা ডুবেছিল ডেল্টা-ঢেউয়ে। এ বারে তাই পর্যটনে রাশ টানতে উৎসবের ব্যস্ততম দিনগুলোতে কয়েকশো উড়ান বাতিল করেছে আমেরিকান বিমান পরিষেবা ব্যবস্থা। ডেল্টা এয়ারলায়েন্স ২৬৮টি উড়ান বাতিল করেছে। ইউনাইটেড এয়ারলায়েন্স ১৯৬টি উড়ান বাতিল করেছে। জেটব্লু-ও বাতিল করেছে একশোর বেশি উড়ান। ডেল্টা জানিয়েছে, রবিবারও দেড়শোর বেশি উড়ান বাতিল হবে।
আমেরিকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নববর্ষের রাতেও কড়াকড়ি বজায় থাকবে। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে ভিড় করতে দেওয়া হবে না লোকজনকে। যাঁরা রাস্তায় থাকবেন, তাঁদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। বিশ্বের অন্য বড় শহরগুলোতেও বর্ষশেষের উৎসব বাতিল করা হয়েছে, নয়তো ছোট করা হয়েছে। আথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে প্রতি বছর আতসবাজির উৎসব হয়। এ বার তা বাতিল হয়েছে। গ্রিসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী থ্যানোস পেলভ্রিস জানিয়েছেন, বড়দিন ও নতুন বছরের সমস্ত পরিকল্পনা এ বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে। বার্লিনেও আতসবাজির রোশনাই দেখতে রাস্তায় ভিড় করায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ় জানিয়েছেন, ২৮ ডিসেম্বর থেকে করোনা-বিধি আরও কঠোর করা হবে। মিউনিখ ও ফ্রাঙ্কফুর্টেও নিয়ম জারি হয়েছে, ১০ জনের বেশি এক জায়গায় ভিড় করা যাবে না। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন জানিয়েছেন, সে দেশেও বছরশেষের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, ‘‘খুব কষ্ট করে হলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি— ট্রাফালগার স্কোয়ারের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। লন্ডনবাসীর নিরাপত্তা সবার আগে।’’ বছরশেষের রাতে আনুমানিক সাড়ে ছ’হাজার মানুষের ভিড় হওয়ার কথা ট্রাফালগার স্কোয়ারে। সাদিক খান জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে অন্য একটি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে। প্যারিসে প্রতি বছর ৩১শে-র রাতে শঁজ়ে-লিজ়ে-তে আতসবাজি প্রদর্শনী হয়। এ বার তা বাতিল হয়েছে। কোনও ডিজে সেটস-ও থাকবে না। উৎসব-অনুষ্ঠান বাতিলের পাশাপাশি গোটা ইউরোপে কঠিন করোনা-বিধি জারি হয়েছে। মাস্ক পরা আবশ্যিক, ভিড় করা যাবে না, গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হলে ভ্যাকসিন-পাস থাকতে হবে। একমাত্র সিডনি এখনও তাদের শো-র পরিকল্পনা অপরিবর্তিত রেখেছে। এ ছাড়া, ব্যাঙ্কক, লাস ভেগাস, কেপ টাউন, দুবাইয়েও বছরশেষে উৎসব হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিশ্বের উচ্চতম বাড়ি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় এ বছরও উৎসব চলবে। তবে করোনা-বিধি মেনে।