ফ্রোরিডার সমকামী ক্লাবে হামলার পর এ বার ফের আইএস নিশানায় বিদ্ধ হল প্যারিস। সোমবার রাতে আইএস হামলাকারীর হাতে খুন হলেন এক পুলিশ কম্যান্ডার ও তাঁর স্ত্রী। ঘটনার দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে আইএস।
ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দক্ষিণ প্যারিসের ম্যাগনানভিল এলাকায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন ৪২ বছরের জাঁ বাপটিস্ট সালভিং। লে মুরোর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের অ্যাসিন্ট্যান্ট চিফ সালভিং সে সময় সাদা পোশাকেই ছিলেন। তাঁর বাড়ির সামনেই ঘাপটি মেরে বসেছিল আততায়ী। সালভিং দরজার কাছাকাছি আসতেই তাঁর উপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। পর পর ছুরির আঘাতে সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন সালভিং। এর পর তাঁর বাড়িতে ঢোকে আততায়ী। বাড়ির ভিতরে ছিলেন সালভিংয়ের স্ত্রী ও তাঁদের তিন বছরের ছেলে। বাড়িতে ঢুকেই তাঁদের পণবন্দি করে সে। স্থানীয় পুলিশের দফতরের কর্মী সালভিংয়ের স্ত্রী তখন প্রাণভয়ে চেঁচাচ্ছেন। তাঁর চি়ৎকার শুনে সচকিত হয়ে পড়ে এলাকার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফরাসি পুলিশের এলিট স্কোয়াড। প্রথমেই সালভিংয়ের বাড়ি-সহ গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা। নিঝুম ম্যাগনানভিল তখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। এর পর শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে আততায়ীর দর কষাকষি। পণবন্দি সালভিংয়ের স্ত্রী ও শিশু সন্তানের চিৎকারের মাঝেই আইএসের নামে শপথ নিতে থাকে আততায়ী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এর পরই একটা ভয়াবহ বিস্ফোরণে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে বাড়িতে ঢোকে এলিট স্কোয়াড। আততায়ীকে গুলি করে মেরে পণবন্দি শিশুসন্তানকে উদ্ধার করে তারা। ঘরেই পড়েছিল সালভিংয়ের স্ত্রীর মৃতদেহ। শারীরিক ভাবে অক্ষত থাকলেও ঘটনায় এখনও আতঙ্কিত সালভিংয়ের শিশুসন্তান।
আরও পড়ুন
প্যারিসের জঙ্গিই বোমা বানিয়েছিল ব্রাসেলসে
হামলায় জড়িত ওই আততায়ীকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফরাসি মিডিয়া জানিয়েছে, বছর পঁচিশের ওই আততায়ীর নাম লারোসি আবালা। পুলিশের খাতায় এর আগেও তার নাম ছিল। ২০১৩-তে জঙ্গি যোগের দায়ে তিন বছরের জন্য জেলও খেটেছিল সে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জঙ্গি নেটওয়ার্কে সদস্য নিয়োগের কাজে যুক্ত ছিল লারোসি। মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে আইএস বলেছে, “আমাদের এক সৈনিক পুলিশের ডেপুটি চিফ ও তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছে।” যদিও এ নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি ফরাসি পুলিশ।
হামলার নিন্দা করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওঁলা একে ‘ঘৃণ্য ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বার্তা, ‘ভয় পাবেন না, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।’ তবে ভয় কাটছে না ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের। হামলার ভয়াবহতায় ফ্লোরিডার নাইট ক্লাবের মতো না হলেও আতঙ্কিত তারা। দেশের ইউরোর মতো টুর্নামেন্ট চলাকালীন কমছে না ফুটবল ফ্যানেদের সংঘর্ষ। তার উপর যোগ হয়েছে গত কালের এই হামলার ঘটনা। ফরাসি পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে এখনও খামতি রয়েছে তা-ই বার বার বেআব্রু হয়ে পড়ছে। শুধু কি তাই, ফ্রান্সের স্মৃতিতে এখনও তাজা গত বছর প্যারিসে জিহাদি হামলার আতঙ্ক, যাতে নিহত হয়েছিলেন ১৩০ জন।