বিপদ যেখানে, যাব সেখানেই: গাজ়ার চিত্রসাংবাদিক

আশরাফেরা গিয়ে দেখেন, প্যালেস্তাইনি তরুণ, ইজ়রায়েলি সেনা— প্রস্তুত দু’পক্ষই। এই বিবদমান দু’পক্ষের বাইরে তাঁরা যে তৃতীয় পক্ষ, তা বোঝাতে আশরাফেরা সে দিন গায়ে দেন নীল জ্যাকেট। যার গায়ে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘প্রেস’।

Advertisement

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

চিত্র সাংবাদিক আশরাফ আবু আমরা। —ফাইল চিত্র।

ইয়াসের মুর্তজ়া। বয়স, ৩০ বছর। ছবি তুলতেন। আচমকা, তলপেট ফুঁড়ে দেয় গুলি।— ঘটনাটা প্রায় আড়াই মাস আগের। সে ঘটনা বলতে গিয়ে কেঁপে ওঠেন বন্ধু আশরাফ আবু আমরা। তবুও মধ্য-গাজ়ার ফ্রিল্যান্স চিত্র-সাংবাদিক আশরাফ ই-মেলে লেখেন, ‘যেখানে বিপদ, সেখানেই ছবি তুলব।’

Advertisement

বিপদের সঙ্গে নিত্য সংসার দায়ের আল-বালাহর বাসিন্দা আশরাফ ও তাঁর সহকর্মীদের। দিনটা, ৬ এপ্রিল। সকাল সকাল অন্য সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে বেরোন আশরাফ। খবর ছিল, ওই দিন গাজ়ার দক্ষিণপ্রান্তের শহর খান ইউনিসে গোলমাল হতে পারে। আশরাফেরা গিয়ে দেখেন, প্যালেস্তাইনি তরুণ, ইজ়রায়েলি সেনা— প্রস্তুত দু’পক্ষই। এই বিবদমান দু’পক্ষের বাইরে তাঁরা যে তৃতীয় পক্ষ, তা বোঝাতে আশরাফেরা সে দিন গায়ে দেন নীল জ্যাকেট। যার গায়ে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘প্রেস’।

শুরু হল প্যালেস্তাইনিদের প্রতিবাদ। আশরাফের অভিজ্ঞতা, ট্রাকে করে আনা হল অজস্র টায়ার। তাতে আগুন দিলেন প্যালেস্তাইনি তরুণেরা। উল্টো দিক থেকে ধেয়ে এল গ্যাস বোমা, বুলেট। আচমকা আকাশ ফুঁড়ে দেখা দিল যুদ্ধবিমান। পড়তে থাকল একের পর এক বোমা। আশরাফ দেখলেন, সীমান্তে লুটিয়ে পড়ছে মানুষ। সেই ‘যুদ্ধভূমি’র একের পর এক ছবি ক্যামেরাবন্দি করছিলেন আশরাফেরা। কাছেই ছিলেন ইয়াসের। হঠাৎই আশরাফের ক্যামেরার ফোকাস নড়ে গেল। দেখলেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ‘প্রেস’ লেখা নীল জ্যাকেট। মাটিতে পড়ে ইয়াসের।

Advertisement

সেই মৃত্যুতেই দিনটা শেষ হয়নি। আশরাফ লিখেছেন, ‘বন্ধুকে হারানোর যন্ত্রণা চেপে রেখেই ছবি তুলছিলাম, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝলসে গেল বাঁ হাতটা। মনে হল, সব শেষ।’ প্রায় অচেতন অবস্থায় আশরাফকে উদ্ধার করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আশরাফের লেখায়, ‘ভেবেছিলাম, আর ছবিই তুলতে পারব না। আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের সে দিন আলাদা করে দেখা হয়নি। তাই এত বড় বিপদ ঘটল।’

আসলে গাজ়ায় সাংবাদিকদের বিপদ নানা রকম। বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় আশরাফ দেখেছেন, প্রথমত, বোমা-গুলিতে মৃত্যুর ভয়। দ্বিতীয়ত, ‘সাংবাদিক’ স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়। যেমন, মৃত্যুর পরে ইয়াসের আদৌ সাংবাদিক কি না, তা নিয়ে তরজা বাধে ইজ়রায়েলি ও প্যালেস্তাইনি কর্তৃপক্ষের। তৃতীয়ত, বিদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিস্তর বাধা রয়েছে গাজ়ার সাংবাদিকদের। যেমন, ২০১৬-য় রাশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক ফোটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছিলেন আশরাফ। কিন্তু ইজ়রায়েলি অবরোধের জেরে পুরস্কার নিতে যেতে পারেননি তিনি।

দীর্ঘ চিকিৎসার পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে আশরাফ ফের ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ নেমেছেন, বিপদের ছবি তুলতে। হাতে ক্যামেরা। গায়ে নীল জ্যাকেট। তাতে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ‘প্রেস’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement