বালুচিস্তানে দুই চিনা নাগরিকের খুন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানাপড়েন বাড়ছে দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রের মধ্যে। —প্রতীকী ছবি।
চিনা নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতি কঠোর করল পাকিস্তান। এত দিন যতটা সহজে পাকিস্তানে ঢুকতে পারতেন চিনারা, ততটা সহজ আর থাকছে না প্রক্রিয়াটা। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রেই এই খবর জানা গিয়েছে। বুধবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক এই নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। যে সব চিনা নাগরিক কর্মসূত্রে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে রয়েছেন, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বার থেকে চিনের কোনও নাগরিক যদি পাকিস্তানে ব্যবসার কাজে যেতে চান, তা হলে আগে তাঁকে আমন্ত্রণপত্র দেখাতে হবে। পাক দূতাবাস স্বীকৃত কোনও সংস্থার আমন্ত্রণপত্র যদি চিনা নাগরিকের কাছে থাকে, তবেই তাঁকে পাক ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। শুধু আমন্ত্রণপত্র থাকলেই অবশ্য কাজ মিটবে না। পাক সরকার স্বীকৃত কোনও বণিকসভার দ্বারা সে আমন্ত্রণপত্র অনুমোদিতও হতে হবে। এর পরে চিনে নিযুক্ত পাকিস্তানি কমার্শিয়াল অ্যাটাশে বা সেই স্তরের কোনও আধিকারিকের কাছ থেকে চিঠি জোগাড় করতে হবে পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক চিনা নাগরিককে। তার পরে মিলবে পাকিস্তান যাওয়ার ভিসা।
এতেই অবশ্য শেষ নয় চিনাদের জন্য কড়াকড়ি। যে চিনারা ভিসা পেয়ে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে রয়েছেন, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে কঠিন করে তোলা হয়েছে। এত দিন পাকিস্তানের বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকেই ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারতেন চিনারা। এ বার থেকে ইসলামাবাদে পাক ইমিগ্রেশন বিভাগের সদর দফতর থেকে ওই বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে।
কর্মসূত্রে পাকিস্তানে থাকা চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নামে যে পদক্ষেপ নওয়াজের সরকার করল, তা নাকি চিনের প্রতি ঘুরিয়ে কড়া বার্তা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের একাংশ এমনই মনে করছে। ছবি: এএফপি।
বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার জন্য যে চিনা নাগরিকরা এখন মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে পাকিস্তানে যাতায়াত করেন, তাঁদের পথও কঠিন হতে চলেছে। চিনের পাক দূতাবাসগুলিকে ইসলামাবাদ নির্দেশ দিয়েছে, এক বছরের বেশি মেয়াদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা আর দেওয়া যাবে না। কারওকে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দিতে হলে আগে চিনা কর্তৃপক্ষের থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্র নিতে হবে বলেও পাক সরকার জানিয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ এবং ‘নেশন’ সূত্রে এই নতুন ভিসা নীতির খবর পাওয়া গিয়েছে।
বালুচিস্তানে সম্প্রতি দুই চিনা নাগরিককে অপহরণ করে খুন করেছে জঙ্গিরা। আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছে। চিন এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বেজিং হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে যে চিনা নাগরিকরা থাকছেন, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসলামাবাদকেই নিতে হবে।
আরও পড়ুন: আমেরিকার ভিসা পেতে মেধাবীদের কোনও সমস্যা হবে না, আশ্বাস ট্রাম্পের
চিনের এই কড়া প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান স্বাভাবিক ভাবেই নড়েচড়ে বসে। কর্মসূত্রে পাকিস্তানে থাকা চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে ইসলামাবাদ তড়িঘড়ি আশ্বাস দেয়। কিন্তু বালুচিস্তানে খুন হওয়া চিনাদের হত্যার দায় পাক সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতেই চেয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেই পাক সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, খুন হওয়া দুই চিনা নাগরিক বালুচিস্তানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করছিলেন। সেই কারণেই তাঁরা জঙ্গিদের রোষে পড়েছিলেন। তবে চিন সে ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট ছিল না। কর্মসূত্রে বা ব্যবসার জন্য চিন থেকে যাঁরা পাকিস্তানে যাবেন, তাঁদের কোনও ক্ষতি বেজিং বরদাস্ত করবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পাকিস্তান এ বার যে পদক্ষেপ করল, তাতে আন্তর্জাতিক মহল বেশ বিস্মিত। চিনাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নামে পাকিস্তান যে ভাবে নিজেদের দেশে চিনাদের প্রবেশটাকেই কঠিন করে তুলল, তা সমস্যা সমাধানের পথ হতে পারে না বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।