হোলি খেলায় মেতেছেন পাক হিন্দু মেয়েরা। ছবি: এ এফ পি।
রঙের উৎসব। ক’দিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল হিন্দু মহল্লায়। কিন্তু ভয়ে-ভয়ে! উৎসবে জঙ্গিরা যদি হামলা চালায়, তা হলে? বিষয়টা আঁচ করে ফাওয়াদ হাসান আর দেরি করেননি। ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এনএসএফ)- এর ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার করাচির স্বামী নারায়ণ মন্দিরের চার দিকে মানববন্ধন তৈরি করলেন তিনি। পাকিস্তানের মাটিতে হিন্দুরা যাতে নিরাপদে আনন্দ করতে পারেন, তার জন্য মুসলিম পড়ুয়াদের মানববন্ধন।
যে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর নানা অত্যাচারের ঘটনার কথা শোনা যায়, সেখানে এমন পদক্ষেপ? আসলে প্রগতিশীল বামপন্থী সংগঠন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া ওই ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের যুক্তি, পাকিস্তানে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও সহানুভূতির আবহ তৈরি করা দরকার। তারই অঙ্গ হিসেবে হোলিকে বেছে নেন ফাওয়াদরা। এ কাজে তাঁরা যে বেশ সফল, তা শুক্রবারের পর স্পষ্ট। এ দিনের মানববন্ধনে যোগ দেওয়ার জন্য ধর্মীয় সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী প্রত্যেককে আহ্বান জানায় এনএসএফ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল ‘ই-ইনভিটেশন’। সাড়া মেলে। আসেন অনেকে। তাঁদের তৈরি মানববন্ধনের মাঝেই রঙের খেলায় মাতেন হিন্দুরা। নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে।
ফাওয়াদের মতে, “আগে আমরা যখন শিয়া গোষ্ঠীর মানুষদের সহমর্মিতা দেখিয়েছিলাম, তখন জয়পাল ছাবরিয়া নামে এক চিকিৎসক পাশে দাঁড়ান। আমাদেরও হিন্দুদের প্রতি সৌজন্য দেখানো দরকার।” তাঁর ব্যাখ্যা, হিন্দু মন্দিরগুলোর অবমাননা, মেয়েদের জোর করে ধর্মান্তরণ, হিন্দু সংস্কৃতি-আচারের অসম্মানের মতো ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই এই কর্মসূচির কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। ফেসবুকে এনএসএফ জানিয়েছে, “সরকার যখন নাগরিকদের পাশে দাঁড়ায় না, তখন পড়ুয়াদেরই এগিয়ে আসতে হয়।” এই বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপে যে পাকিস্তান বদলাবে না, তা-ও মানেন ফাওয়াদরা। তবে একই সঙ্গে মনে করান, “আপনি আজ অন্যের অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর পাশে না দাঁড়ান, তা হলে ভবিষ্যতে আপনার অধিকারের জন্যও পাশে কাউকে পাবেন না।” গত বছর ডিসেম্বরে পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে জঙ্গি-হামলায় দেড়শো পড়ুয়ার মৃত্যুর পর এটা আরও বেশি করে বুঝছেন পাক বাসিন্দারা। তাঁরা জানেন, জঙ্গি-গুলি কোনও ধর্মকে রেয়াত করে ছুটে আসে না। তাই সকলের পাশে দাঁড়ানো দরকার!