লস্কর ই তইবা প্রধান হাফিজ সইদকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিল পাকিস্তানের এক বিচার বিভাগীয় বোর্ড। হাফিজকে মুক্তি দিলে সন্ত্রাস প্রশ্নে ইসলামাবাদ ফের কোণঠাসা হতে পারে বলে আশঙ্কা পাক সরকারের। এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে ভারত।
মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজের বিরুদ্ধে বার বার সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান সেই মামলায় ওই জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি। বরং ভারতের দেওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ যথেষ্ট নয় বলেই দাবি করেছে পাকিস্তান। জানুয়ারি মাসে সইদ ও তার চার সহযোগীকে সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে গৃহবন্দি করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপেই পাক সরকার এই পদক্ষেপ করেছিল বলে ধারণা কূটনীতিকদের।
গৃহবন্দির আদেশের বিরুদ্ধে লাহৌর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল লস্কর নেতারা। সম্প্রতি সইদের চার সহযোগী মুক্তি পায়। এক বিদেশি গুপ্তচর সংস্থা সইদকে খুন করার চক্রান্ত করছে বলে দাবি করে পাক সরকার। ফলে গৃহবন্দি জঙ্গি নেতার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
আজ লাহৌর হাইকোর্টের বিচারবিভাগীয় বোর্ডে সইদের আর্জির শুনানি ছিল। সইদের হাজিরার সময়ে আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। সইদের সংগঠন জামাত উদ দাওয়ার বেশ কিছু সমর্থক হাজির ছিল।
শুনানির সময়ে পাক সরকারের তরফে জানানো হয়, সইদকে মুক্তি দিলে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হবে। সইদের আইনজীবী এস কে ডোগর জানান, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি সরকার। তার পরে বিচারবিভাগীয় বোর্ড জানিয়েছে, সইদের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা না থাকলে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
পাক সরকার সূত্রে খবর, এখনই সইদকে মুক্তি দিলে যে মার্কিন চাপের মুখে পড়তে হবে তা পাক সরকার বিলক্ষণ জানে। এমনকী পাকিস্তানের উপরে নিষেধাজ্ঞাও জারি হতে পারে। এমনকী মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ হাফিজকে খুন করার পরিকল্পনাও করতে পারে
বলে আশঙ্কা পাক প্রশাসনের একাংশের। লস্কর প্রধানের বিরুদ্ধে অন্য বেশ কিছু মামলা রয়েছে। সেগুলিতে নয়া আর্জি পেশ করে তাকে আটকে রাখা যেতে পারে। পাক সরকার এই বিষয়ে আইনজ্ঞদের মত জানতে চেয়েছে।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, সইদকে মুম্বই হামলার মামলায় জড়ানোর পক্ষে ভারতের দেওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ যথেষ্ট। কিন্তু পাকিস্তান তা করতে আগ্রহী নয়। মার্কিন চাপের মুখে সইদ আটক হয়েছিল বটে। কিন্তু জঙ্গিদের সমর্থক সেনা ও আইএসআইয়ের চাপে এ বার পিছু হটতে হচ্ছে নির্বাচিত সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তান এখনও সারা বিশ্বকে ধোঁকা দিচ্ছে। পাকিস্তানে বসে জঙ্গিরা অন্য দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার স্বাধীনতা পায়। আমাদের আশা, ইসলামাবাদ বিশ্বকে সন্ত্রাস নিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনের চেষ্টা করবে।’’
সাউথ ব্লকের আর এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আমাদের বিচার বিভাগের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা সারা বিশ্বে স্বীকৃত। গতকালই আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বিচারপতি দলবীর ভাণ্ডারী। কিন্তু পাকিস্তানে দেখছি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীর তকমা পাওয়া ব্যক্তিও অতি সহজেই ছাড় পেয়ে যায়।’’
২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পরেও সইদকে গৃহবন্দি করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ২০০৯ সালে আদালতের নির্দেশে মুক্তি পায় সে। ভারতের দাবি, বিশ্বের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই সইদকে মাঝে মাঝে গৃহবন্দি করে পাকিস্তান। সেই পদক্ষেপে লস্করের কাজকর্ম কোনওভাবেই ব্যাহত হয় না।