পারভেজ মুশারফ। —ফাইল চিত্র।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে মৃত্যু হলে মুশারফের দেহ তিন দিন ইসলামাবাদের ডি-চকে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া সেই বিচারপতিকে ‘মানসিক ভাবে অসুস্থ’ বলে দাবি করল পাকিস্তান সরকার। ওই বিচারপতির অপসারণ চেয়ে এ বার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে আবেদন করতে চলেছে পাক-সরকার।
পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী ফারোগ নাসীম পেশোয়ার হাইকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের মুখ্য বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এই ধরনের রায় পাকিস্তানের আইনের বিরোধী বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ফেডারেল গভর্মেন্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও বিচারপতি যদি এমন রায় দেন তাহলে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং অযোগ্য।’’ পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের কোনও বিচারপতিকে সরানোর অধিকার রয়েছে এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে।
আরও পড়ুন: সাজার আগে মৃত্যু হলে মুশারফের দেহ ঝোলানো থাকবে পার্লামেন্টের কাছে, নির্দেশ পাক আদালতের
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের বিরুদ্ধে গত ১৭ ডিসেম্বর রায় দেয় পেশোয়ার হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। ২০০৭ সালে সংবিধান বাতিল করে সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য তিন সদস্যের বেঞ্চ তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। ২০১৪ সালেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চার্জ গঠন হয়। ১৬৭ পাতার সেই রায়ে পারভেজ মুশারফের ফাঁসির সাজা হয়। শুধু তাই নয়, তাতে এও উল্লেখ করা হয় যে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে যদি মুশারফের মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁর মৃতদেহ ইসলামাবাদের ডি-চকে নিয়ে আসতে হবে। সেখানে তা তিন দিন ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এই রায় প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মুশারফ অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরোধিতা করেছে পাকসেনাও।
আরও পড়ুন: ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন’, ভারত-মার্কিন যৌথ বার্তা পাকিস্তানকে
২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন পারভেজ মুশারফ। ২০০৮ সালে ইমপিচমেন্ট এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন ৭৬ বছরের মুশারফ। একটি দুর্নীতির মামলায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানেরই অন্য আদালত। সেই মামলায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়েছেন তিনি। মুশারফ প্রায় তিন বছর ধরে দুবাইয়ে থাকেন। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে গিয়ে আর ফেরেননি। তার কয়েক মাস পরেই বিশেষ আদালত তাঁকে অপরাধী ঘোষণা করে। বারবার আদালতে হাজির না হওয়ায় পাকিস্তানে থাকা মুশারফের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত। পরে আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় তাঁর পাসপোর্ট এবং সমস্ত পরিচয়পত্রও।