মাসুদ আজহার। ছবি: এএফপি।
দীর্ঘ দিন ধরেই নয়াদিল্লি অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তানের মাটিতে বসে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার। এ বার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি মেনে নিলেন, জইশ প্রধান তাঁদের দেশেই রয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মাসুদের বিরুদ্ধে ভারত ‘অকাট্য’ প্রমাণ দিতে পারলে, পাকিস্তান ব্যবস্থা নেবে। কুরেশির বক্তব্যকে অবশ্য গুরুত্বই দিচ্ছে না ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
আমেরিকার চ্যানেল সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কুরেশি বলেন, ‘‘আমার কাছে যা খবর, মাসুদ আজহার পাকিস্তানে রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ যে বাড়ির বাইরে বার হতে পারেন না।’’ পুলওয়ামায় জইশ জঙ্গির হামলায় সিআরপির ৪৯ জন জওয়ান নিহত হয়েছিলেন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই হামলার দায় স্বীকারও করে মাসুদের জঙ্গি সংগঠন।
নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই পুলওয়ামা হামলায় জইশের জড়িত থাকার ঘটনা এবং পাকিস্তানে থাকা ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর শিবির ও নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ইসলামাবাদকে দিয়েছে।
পাকিস্তানের কব্জায় থাকা ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা গত কাল পাক পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার পরেই ওই চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন কুরেশি। মাসুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না প্রশ্ন করা হলে কুরেশি বলেন, ‘‘তারা (ভারত) যদি জোরদার এবং অকাট্য প্রমাণ দিতে পারে, তা হলে পাকিস্তানের আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে এমন প্রমাণ দিতে হবে যা পাকিস্তানের মানুষ এবং আদালতে বিশ্বাসযোগ্য হয়।’’ ওই সাক্ষাৎকারে কুরেশি আরও জানিয়েছেন, ইমরান খানের সরকার সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের নীতি হল, কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনকে পাকিস্তানে বসে কারও বিরুদ্ধে (ভারত-সহ যে কোনও দেশ) সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করতে দেব না।’’
কুরেশির বক্তব্য নিয়ে নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য সরকারি ভাবে কিছু বলেনি। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, কুরেশি যা বলেছেন তা কার্যত কাটা রেকর্ড। পঠানকোট হামলার পরেও মাসুদের দিকে আঙুল উঠেছিল। তখন জইশ প্রধানকে গ্রেফতার করে লোকদেখানো পদক্ষেপ করেছিল ইসলামাবাদ। সে তখন ছিল আইএসআইয়ের ‘নিরাপদ আশ্রয়’-এ। এ ক্ষেত্রেও তার বেশি কিছু করা হবে বলে আশা করছে না সাউথ ব্লক। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। আমেরিকা-সহ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির সামনে জঙ্গিদের স্বর্গোদ্যান হিসেবে পাকিস্তানকে তুলে ধরা এবং মাসুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করানো। এই নিয়ে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স এমনকি চিনের সঙ্গে দৌত্য চালাচ্ছে ভারত।
বিদেশ মন্ত্রকের সূত্রটি বলছে, পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার উপর ভারতের কোনও আস্থা নেই। মুম্বই হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পাকিস্তান।