তালিবানের ভয়ে গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য পঞ্জশিরে। ছবি: এএফপি।
গ্রামের পর গ্রাম লোকশূন্য। চরম নিস্তব্ধতা যেন গিলে খাচ্ছে গ্রামগুলিকে। মাঝেমধ্যেই সেই নিস্তব্ধতার বুক চিরে দিচ্ছে গোলাগুলির আওয়াজ! পঞ্জশিরে তালিবানের কব্জায় আসা প্রদেশগুলির অন্তত সাতটি জেলার বিভিন্ন গ্রামে ধরা পড়েছে একই ছবি।
বাড়িগুলির দরজা জানলা বন্ধ। মূল রাস্তা, অলিগলি শুনশান। মড়ক লাগলে যেমন গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়, এ যেন ঠিক তেমনই। তালিবান পঞ্জশিরে ঢোকার আগে থেকেই গ্রাম ছেড়ে দলে দলে কাবুলের দক্ষিণ প্রান্তে পালিয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। দু’একটি বাড়িতে লোকের দেখা মিলছে বটে। কিন্তু তাঁরা সকলেই বৃদ্ধ। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সামর্থ নেই, তাই তালিবানের চোখরাঙানি সয়েই ঘর আগলাচ্ছেন তাঁরা। আর রয়েছে গবাদি পশু। সেগুলিও নিয়ে যেতে পারেননি গ্রামবাসীরা। ফলে তারাও অনাথ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
খেঞ্জ জেলার পাহাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল গফুর শূন্য চোখে গ্রামের রাস্তা, ঘরবাড়িগুলির দিকে চেয়ে প্রলাপ বকছিলেন। এই গ্রামকে আগের অবস্থার সঙ্গে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিনি। পরিবারের অল্পবয়সি এবং কচিকাঁচারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু আব্দুলদের শুধু বসে থাকা ছাড়া আর যে কোনও উপায় নেই। তিনি বলেন, “খেঞ্জের এই পাহাড়ি গ্রামে মাসখানেক আগেও একশো পরিবারের বাস ছিল। আজ হাতেগোনা কয়েক জনই রয়েছেন। বাকিরা সবাই চলে গিয়েছেন।”
পঞ্জশিরের বাজার্ক জেলার মালাস্পা গ্রামে তালিবান। ছবি: এএফপি।
এই পাহাড়ের মালাস্পা গ্রামে সবুজে ঘেরা উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে তরুণ-তরুণী থেকে নানা বয়সের মানুষ সেখানে যেতেন,গল্প করতেন। এক সময় যে উপত্যকা মানুষের আওয়াজে ভরে থাকত, এখন সেখানে নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কিছু অনুভব করা যায় না। এখন শুধু বছর সাতষট্টির খোল মহম্মদ এবং তাঁর একটি গাধাই শুধু রয়েছে সেখানে। তালিবানের দখলে চলে যাওয়া পঞ্জশিরের তিনটি প্রদেশের সাত জেলা থেকে এই ছবিই উঠে আসছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি ওই জায়গাগুলি সরেজমিনে ঘুরে দেখে তারই তাজা ছবি তুলে ধরেছে।
পঞ্জশিরে ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স ফোর্স (এনআরএফ) লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পঞ্জশিরের যে টুকু অংশ বাকি আছে সে টুকুই বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কিন্তু যে ভাবে তালিবান একের পর এক এলাকা দখল করা শুরু করেছে তাতে কত দিন আগলে রাখতে পারবে তারা তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও আহমদ মাসুদ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও পঞ্জশির রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।