টাইটান ডুবোজাহাজের চিত্র। —ফাইল চিত্র।
১১১ বছর আগে অতলান্তিক মহাসাগরের অতলে যে জায়গায় টাইটানিক জাহাজটি ডুবেছিল, সেখানে ওই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য রবিবার পাঁচ যাত্রীকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল ডুবোজাহাজ টাইটান। যাত্রা শুরু করার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর টাইটানের ‘মাদারশিপ’ পোলার প্রিন্সের সঙ্গে তার সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে তাতে জানা গিয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বহু ক্ষণ পর আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে সেই খবর পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আরও আগে উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে খবর পৌঁছলে তারা আরও দ্রুততার সঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালাতে পারত।স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, রবিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় মাদারশিপের। কিন্তু ওশানগেট নামে যে সংস্থার মালিকানাধীন এই ডুবোজাহাজ, তাদের তরফে তৎপরতার সঙ্গে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে খবর পাঠানো হয়নি। বরং প্রায় ৮ ঘণ্টা পর বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী খবর পায়। তারও পরে কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে খবর পাঠানো হয়।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, টাইটানের সঙ্গে সংস্থার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রবিবার রাত ৯টা ১৩ মিনিট নাগাদ কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে খবর পাঠানো হয়।আমেরিকার নৌসেনা বাহিনীর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কমান্ডার পদে কর্মরত লেফটেন্যান্ট ডেভিড মার্কেটের দাবি, ডুবোযানের যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ। ২০২১ সাল থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর অভিযান চালু করেছে ওশানগেট সংস্থা। মাথাপিছু আড়াই লক্ষ ডলারের বিনিময়ে গভীর সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে আনে তারা।
রবিবারেও পাঁচ জনকে নিয়ে কানাডার উপকূলের নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে অতলান্তিকের গভীরে নেমেছিল টাইটান। কিন্তু যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরেই নিখোঁজ হয়ে যায় ডুবোযানটি। উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং কানাডার সেনাবাহিনীকে জানানো হলে যুদ্ধবিমান-সহ জাহাজ নামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। ওশানগেট সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ২১ ফুট লম্বা এবং ১০,৪৩২ কিলোগ্রাম ওজনের টাইটান সমুদ্রের ১৩ হাজার ফুট গভীরে জলের প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে সক্ষম। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি ভিন্ন। ডুবোজাহাজের ভিতরে ৯৬ ঘণ্টার জন্য অক্সিজেন মজুত থাকলেও এই পরিস্থিতিতে টাইটানের ফাটল ধরা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। যে কোনও মুহুর্তে কোনও পাইপে ফাটল ধরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তলার দিক থেকে ডুবোজাহাজের ওয়াটার সিঙ্কের ভিতর জল প্রবেশের আশঙ্কাও দূর করা যাচ্ছে না। এর ফলে ডুবোজাহাজের ভিতর বাতাস চলাচলের অসুবিধা হবে। তা ছাড়া টাইটানের ভিতর সে সময় যা চাপ সৃষ্টি হবে তা সমুদ্রের জলের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশি।
আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা জানি সকলে আশা করে রয়েছেন যে আমরা উদ্ধারকাজে সফল হব। কিন্তু সত্যি বলতে কী, উদ্ধারকাজের জন্য আমরা ২০০০ ফুটের বেশি অন্য কোনও ডুবোজাহাজ নামাতে পারি না।’’সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সাবমেরিনটিতে রয়েছেন ব্রিটেনের কোটিপতি ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং। ৫৯ বছর বয়সি এই প্রৌঢ় অভিযাত্রী অজানা জায়গায় গিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে ভালবাসেন। গত রবিবারই সমাজমাধ্যমে তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া রয়েছেন পাকিস্তানের দুই ব্যবসায়ী শাহজ়াদা দাউদ, তাঁর পুত্র সুলেমান, ওশানগেট সংস্থার মুখ্য আধিকারিক স্টকটন রাশ এবং ফরাসি বিমানচালক পল হেনরি নার্জিওলেট।