ইরানের জেলবন্দি মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মহম্মদি। ছবি: সংগৃহীত।
‘নারীদের উপর শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই’কে স্বীকৃতি দিল নোবেল কমিটি। শুক্রবার ২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হল। এ বার এই পুরস্কার পেতে চলেছেন ইরানের জেলবন্দি মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মহম্মদি।
ইরানের ধর্মীয় মৌলবাদী শাসনে মেয়েদের অধিকার খর্ব করার অভিযোগ উঠেছে বার বার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশি হেফাজতে সে দেশের তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর হিজাব-বিতর্ক মাথাচা়ড়া দিয়ে ওঠে। অভিযোগ ওঠে যে সঠিক ভাবে হিজাব না পরার জন্যই ‘চরম শাস্তি’ পেতে হয়েছে তাঁকে। তার পরেই ইরান জুড়ে চুল কেটে, হিজাব খুলে প্রতিবাদে নামেন নারীদের এক বড় অংশ।
এই আন্দোলনে অবশ্য অংশ নিতে পারেননি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত নার্গিস। কারণ তখন তিনি জেলে বন্দি। এখনও স্পষ্ট নয় যে, পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর জেলে বসে তিনি পেয়েছেন কি না। রক্ষণশীল ইরানে মেয়েদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে মোট ১৩ বার জেলে গিয়েছেন নার্গিস। পাঁচ বার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। জীবনের ৩১টি বছর জেলের ভিতরেই কাটাতে হয়েছে বছর পঞ্চাশের নার্গিসকে। ইরানি প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মতাদর্শের প্রচার চালানোরও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ইরানের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ডিফেন্ডার্স অফ হিউম্যান রাইটস সেন্টার’ দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানে মানবাধিকার মূলত নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। এই সংস্থার সহকারী প্রধান নার্গিস। এই সংস্থার প্রধান শিরিন ইবাদি ২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
নোবেল কমিটির তরফে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নার্গিসের লড়াইটা শুরু হয় নব্বইয়ের দশক থেকে। তখন তিনি ইরানের একটি কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতেন। সেই সময়ই সে দেশে নারীদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে প্রথম সরব হন তিনি। তার পরেও অবশ্য ইরানে নারীদের অবস্থার বিশেষ হেরফের হয়নি। পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলি এই বিষয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে তেহরান। আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে সে দেশের মেয়েদের প্রতি। তবু নার্গিসদের লড়াই চলেছে। সেই লড়াইকেই স্বীকৃতি দিল নোবেল কমিটি।