মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল। ফাইল চিত্র।
উত্সবমুখর নিসে ট্রাক নিয়ে হত্যালীলা চালিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড় করে দেওয়া মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল আসলে কে? আদৌ কি সে কোনও জঙ্গি সংগঠেনের সঙ্গে যুক্ত ছিল? কেনই বা এই হামলা চালাল? এই নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে গোটা বিশ্ব। কেমন ছিল নিসের এই হত্যাকারী? কী ভাবে তাকে চিনতেন প্রতিবেশীরা?
ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরে নিসের হামলার দায় নিয়েছে আইএস। কিন্তু এই উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে বুহলেলের সম্পর্ক ছিল বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীরা কেউ। তিউনিশীয় বংশোদ্ভূত এই ফরাসি নাগরিক নিস শহরেরই একটি হাউজিং কমপ্লেক্সের ১২ তলায় থাকত। কোনও দিন তাকে মসজিদে যেতে দেখেননি কেউ। প্রতিবেশীরা কেউ তাঁর মধ্যে ধর্মকর্মের প্রতি আগ্রহ বা আকর্ষণ লক্ষ করেননি কখনও। এ হেন বুহলাল হঠাত্ আইএস ‘জেহাদি’ হয়ে মানুষ মারতে নেমে পড়ল? না, মানতে পারছেন না তাঁদের কেউই, যাঁরা কাছ থেকে বা দূর থেকে দেখেছেন এই বছর একত্রিশের বদরাগী যুবককে।
হ্যাঁ, বরং এই বদরাগী পরিচয়েই বেশি পরিচিত ছিল বুহলেল। প্রায়শই স্ত্রীকে ধরে মারধর করত। তিরিক্ষে মেজাজের এই যুবককে কিছুটা ভয় আর কিছুটা বিরক্তিতেই এড়িয়ে চলতেন অধিকাংশ প্রতিবেশী। প্রায় সর্বক্ষণ নেশাও করে থাকত বুহলেল।
এক সময় একটি কারখানার ট্রাক চালক হিসাবে কাজ করত। কিন্তু ট্রাক চালাতে চালাতে নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল একবার। পর পর চারটে গাড়িকে পিষে দিয়েছিল তার ট্রাক। যথারীতি চাকরি যায়। আর চাকরি যাওয়ার পর আরও বদমেজাজি হয়ে ওঠে বুহলেল। এর পর বেশ কয়েক বার ছোটখাটো গোলমাল আর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। নাম ওঠে পুলিশের খাতায়। বেশ কয়েক বার লক আপ বা জেল খাটতেও হয়েছে।
কিন্তু এই মানুষটি এত বড় হত্যালীলা চালাল? এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই। নিসে যখন ট্রাক দিয়ে একের পর এক মানুষকে পিষছে, তখনও পরিচিতরা আন্দাজ করতে পারেননি বুহলেল-ই এর মূল হোতা। পুলিশ যখন তাকে গুলি করে মারে, যখন তার পরিচয় সামনে আসে, প্রতিবেশীরা সকলেই অবাক। এই সেই বুহলেল!
এক ধরনের অপরাধমনস্কতা যে বুহলেলের ছিল তা পুলিশ থেকে প্রতিবেশী সবার কাছেই পরিষ্কার। কিন্তু উগ্র ধর্মীয় কোনও আবেগ থেকে তিনি এ ধরনের কাজ করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে না তদন্তকারীদেরও। বুহলেলের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার সব রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুহলেলের অতীতে কোনও রকম জঙ্গি যোগের সূত্র মেলেনি। কিন্তু অন্য দিকে আবার নিসের ট্রাক হামলার দায় নিচ্ছে আইএস। সে দাবি মানলে বুহলেলকে আইএসের লোক বলেই মানতে হবে। এখনও যা মেনে নিতে রাজি নয় ফরাসি পুলিশ। কিন্তু আইএসের দাবি যদি সত্যি হয়? তবে আইএস সম্পর্কে আর একটা সম্ভাবনার দিক খুলে যাবে। শুধু ধর্মপ্রাণ যুবকদের ব্রেনওয়াশ করে উগ্র রাজনীতিতে টেনে আনাই নয়, সাধারণ অপরাধীদেরও কি এ বার গণহত্যার কাজে লাগাচ্ছে তাঁরা?
আরও খবর...