হাফিজ সইদ। ছবি- সংগৃহীত।
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার টাকায় মসজিদ বানানো হয়েছে হরিয়ানায়। গরিব গ্রামগুলিতে মেয়েদের বিয়ে দিতেও দেদার টাকা বিলোচ্ছে কট্টর জঙ্গি হাফিজ সইদের হাতে গড়া সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ওই মসজিদের ইমামকে জেরা করে এ কথা জানতে পেরেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার দায়ে মসজিদের ইমাম মহম্মদ সলমন আর তাঁর দুই সাগরেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম মহম্মদ সেলিম ও সাজ্জাদ আবদুল ওয়ানি।
মসজিদটি বানানো হয়েছে হরিয়ানার পালওয়াল জেলার উট্টাওয়ার গ্রামে। মসজিদটির নাম- ‘খুলাফা-ই-রাশিদিন’। ওই মসজিদের ইমাম মহম্মদ সলমন জেরায় এনআইএ-কে জানিয়েছেন, লাহোরের একটি অসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘ফালাহ-ই-ইনসানিয়াৎ ফাউন্ডেশন (এফআইএফ)’-এর কাছ থেকে তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের ওই অসরকারি সংস্থা এফআইএফ চালায় হাফিজ সইদের হাতে গড়া রাজনৈতিক সংগঠন ‘জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি)’। কট্টর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা যার ছাতার তলায় রয়েছে। এফআইএফ-এরও নাম রয়েছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকায়।
এনআইএ-র এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, হরিয়ানার গ্রামে ওই মসজিদের ইমাম মহম্মদ সলমনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, দুবাইয়ে থাকার সময় তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে।
এনআইএ-র কর্তাটি বলেছেন, ‘‘হাফিজ সইদের দলের চালানো ওই অসরকারি সংস্থাটি হরিয়ানার উট্টাওয়ার গ্রামে মসজিদটি বানানোর জন্য ইমাম মহম্মদ সলমনকে ৭০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্যেও টাকা দেওয়া হয়েছিল ওই ইমামকে। মসজিদটি এখন কার টাকায় চলছে, আর সেই টাকা কী ভাবে খরচ করা হচ্ছে, এখন আমরা তার তদন্ত করছি।’’
আরও পড়ুন- গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন সেনাকর্তা
আরও পড়ুন- অনেককেই গোপনে হত্যা করিয়েছেন পুতিন, সাক্ষাৎকারে বললেন ট্রাম্প
এনআইএ সূত্রে খবর, এখন ওই মসজিদের প্রশাসনিক কার্যালয়ের কর্মী ও পদস্থ কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মসজিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্টের পাস বুক, চেক বুক, টাকা লেনদেনের রেকর্ড বুক, মসজিদে কারা কারা কোথা থেকে ডোনেশন দিয়েছেন, তা নগদে না চেকে দেওয়া হয়েছে, সেই সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডোনেশনের বিনিময়ে মসজিদের তরফে কোনও রশিদ দেওয়া হয়েছে কি না, তারও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা জানতে পেরেছে, মসজিদের জমি-জায়গা গ্রামবাসীরা দিলেও, তা কত টাকায় বানানো হয়েছে, তা কোথা থেকে কী ভাবে এল, গ্রামবাসীরা তার বিন্দুবিসর্গও জানেন না। গ্রামের বাসিন্দারা শুধু জানেন, খরচের বড় অংশটাই দিয়েছেন ইমাম মহম্মদ সলমন। যাঁর বাড়ি দিল্লিতে। গ্রামবাসীদের ধারণা ছিল, মসজিদ বানানোর টাকাটা নিজের পকেট থেকেই দিয়েছিলেন ইমাম সলমন।
এনআইএ খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে, কয়েক বছর আগে ডেয়ারি আর ট্যাক্সির ব্যবসায় খুব লোকসান হয়েছিল সলমনের। তার পরেই তিনি চলে যান দুবাই ও সৌদি আরবে। আর সেখানে গিয়েই আচমকা ফুলে-ফেঁপে ওঠেন সলমন। হাফিজের দলের চালানো অসরকারি সংস্থা এফআইএফ হাওয়ালার মাধ্যমেই সলমনের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছিল বলে খবর পেয়েছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা।
ওই গ্রামে হাফিজের দল আর তার ছাতার তলায় থাকা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর দেদার টাকা বিলিয়ে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছে, এমনটাও সন্দেহ করছে এনআইএ। কারণ, মসজিদের ইমাম সলমন এই সব করতে পারেন, গ্রামের অনেকেই তা মানতে চাইছেন না।
এনআইএ-র কর্তাদের গ্রামের এক বাসিন্দা খালিদ হুসেন বলেছেন, ‘‘গ্রামের কেউই এই সব (পড়ুন, সলমনের অপকীর্তি) বিশ্বাস করবেন না। সলমন খুব বড় পরিবারের ছেলে। ওঁর পরিবারের কারও নাম নেই পুলিশের খাতায়।’’