হিথরো এয়ারপোর্ট। ছবি: রয়টার্স
সবে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ব্রিটেন-আমেরিকায়। এর মধ্যেই উপস্থিত করোনার নয়া আতঙ্ক। বড়দিনের মুখে প্রায় ‘একঘরে’ ব্রিটেন। ব্যঙ্গ করে কেউ বলছেন, ইউরোপের ‘অসুস্থ দেশ’। গত এক বছরে ক্রমাগত নিজেদের ‘চরিত্র’ বদলেছে নভেল করোনাভাইরাস। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই ভাইরাসের এই মিউটেশন। বর্তমানে পৃথিবীতে হাজার খানেক ‘করোনা-স্ট্রেন’ রয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনে হাজির নয়া ‘স্ট্রেনটি’ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অন্যতম কারণ, ১৪টি মিউটেশন ঘটেছে এই ‘স্ট্রেনে’। আর এর মধ্যে ৭টি বদলই ঘটেছে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে। যা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্রিটেন কিন্তু এই প্রকারের ভাইরাসটির উৎসস্থল নয়। এপ্রিল মাসে এর প্রথম দেখা মিলেছিল ব্রাজিলে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণও এই স্ট্রেন। যে কোনও ভাবেই হোক, সেটি পৌঁছে গিয়েছে ব্রিটেনে। সেপ্টেম্বরে এ দেশে প্রথম ধরা পড়ে ‘স্ট্রেনটি’। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে ডিসেম্বরে। আর তার জেরে দেশটাকে প্রায় ‘বয়কট’ করেছে গোটা ইউরোপ। এমনকি, হংকং, কানাডাও।
কাল থেকেই শুরু হয়েছে বয়কট-পালা। এক এক করে সমস্ত যাত্রিবাহী উড়ান বাতিল করেছে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, আইরিশ রিপাবলিক। আজ যোগাযোগ বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে হংকং, কানাডা, ভারতও।
ডোভার বন্দরে কাল থেকে বিশৃঙ্খলা। আচমকাই ৪৮ ঘণ্টার জন্য ব্রিটেন-সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ফ্রান্স। মোটরওয়েতে লম্বা লাইন ট্রাকের। ফেরি-যোগাযোগও থমকে। অস্ট্রিয়াও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সব চেয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছে বুলগেরিয়া। কাল মধ্যরাত থেকে ব্রিটেনে যাওয়া-আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যা বহাল থাকবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রিটেন-পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিও ব্রাসেলসে জরুরি আলোচনায় বসতে চলেছে।
থমথমে পরিবেশ, বড়দিনের মরসুমে ব্রিটেনকে চেনাই দায়। লন্ডনের ব্যস্ততম রাস্তা অক্সফোর্ড স্ট্রিটে জনমনিষ্যি নেই। দোকানপাট, কাফে, রেস্তরাঁ বন্ধ। টিয়ার-৪ লকডাউন। বাড়ির বাইরে মেলামেশা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সব নিয়ম মেনেও রবিবার এক দিনে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৫,৯২৮ জন। সাত দিন আগে আক্রান্ত-সংখ্যা যা ছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ। গত কাল ৩২৬ জন মারা গিয়েছেন। এই নিয়ে এ দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৭,৪০১। এই পরিস্থিতির জন্য নতুন ‘স্ট্রেনটিকে’ দায়ী করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ‘‘সব কিছু হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।’’ অর্থনৈতিক অবস্থাও বেসামাল। বড়দিনের ছুটিতে বাতিল হওয়া রেলের টিকিটের মূল্য লোকজনকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দোকান-বাজারে বিক্রি নেই। ফুলের দোকানিরা জানিয়েছেন, না-বিক্রি হওয়া ফুল তাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চান।
এর মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে সদ্য ছাড়পত্র পাওয়া ফাইজ়ারের টিকা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, টিকা অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। সেটা সামগ্রিক স্পাইক প্রোটিনটাকেই নাশ করবে। ফলে ধরে নেওয়া যায়, স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনে টিকার কার্যকারিতা কমবে না। বিষয়টা পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে একাংশের দাবি, ‘‘ভাইরাসের মিউটেশন পরিচিত বিষয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে ‘আপডেট’ করতে হবে প্রতিষেধকটিকে।’’