অদ্ভুত সব আচরণ প্রকাশ পাচ্ছিল এই গ্রামের মানুষের মধ্যে। কারও ঘুমই ভাঙছিল না। তো কেউ চোখের সামনে অদ্ভুত এবং ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলেন।
এমন ভাবেই তিন বছর কেটে যায়, সারা বিশ্বের কাছেই গ্রামবাসীদের আচরণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
টানা তিন বছর পর এ ভাবে কাটানোর পর জানা যায় গ্রামবাসীদের এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ কী?
যে গ্রামের কথা হচ্ছে, সেটি কাজখস্তানে। ছোট গ্রামটির নাম কালাচি।
এই গ্রামের শিশু থেকে বয়স্ক, সকলের মধ্যেই এই লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল।
২০১২ থেকে ২০১৫ মূলত এই ৩ বছরের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটেছিল। গ্রামের ১৬০ জন বাসিন্দা অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
কারও হয়তো ঘুমই ভাঙছিল না। এমনও হয়েছে যে টানা ৬ দিন ঘুমিয়ে চলেছেন। তারপর যখন ঘুম ভেঙেছে যৌন চাহিদা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।
আবার কারও চোখের সামনে সারাক্ষণ অদ্ভুত সব দৃশ্য ঘুরে বেড়াত। কখনও বিছানার মধ্যে বিষধর সাপ দেখতে পেতেন, তো কখনও পক্ষীরাজ ঘোড়া ছুটে যেতে দেখতে পেতেন কেউ কেউ।
এ ছাড়া খাবারে অনীহা, মাথা ঘোরা-সহ নানা শারীরিক দুর্বলতা তো ছিলই তাঁদের মধ্যে। কেন এমন ঘটছিল?
২০১৪ সালে প্রথম এ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবর সারা বিশ্বের নজর কাড়ে। ওই গ্রামের অসুস্থদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
এই রোগের নাম দেওয়া হয় ‘স্লিপি হলো’। রোগের কারণ নিয়ে নানা মতবাদ সামনে আসতে থাকে। পরবর্তী কালে এর প্রকৃত কারণ জানা যায়।
গ্রামটির কাছেই ছিল ইউরেনিয়ামের খনি। খনির বিষাক্ত পদার্থ মিশে জল দূষণের ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন বহু গবেষক।
২০১৫ সালে কাজাখস্তানের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তাতে কারণ হিসাবে উল্লেখ করা ছিল, বাতাসে কার্বন মনোক্সাইডের অতিমাত্রাই এর কারণ।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, বাতাসে স্বাভাবিক পরিমাণের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ছিল কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পরই এই গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এখন ওই গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। তাঁরা সকলেই পুরোপুরি সুস্থ।