সাম্প্রতিক অশান্তির প্রতিবাদে সম্প্রীতি সমাবেশ। শনিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ছবি: বাচ্চু বড়ুয়া।
সাম্প্রতিক অশান্তির পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বার করতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় মঞ্চ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গোটা দেশে অনশন অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয় পরিষদের ডাকে। বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন ছাড়া বহু রাজনৈতিক দলও এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিল। ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচির পরে সম্প্রীতি সমাবেশ ও মিছিল করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহি, সিলেট— সর্বত্র।
ঢাকায় এ দিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিটি পালিত হয় শাহবাগের মোড়ে। সেখানে সভা থেকে আট দফা দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি রয়েছে পয়লা নম্বরে। ‘প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশের পরেও পুলিশ ও প্রশাসনের যে সব আধিকারিক অশান্তি থামাতে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন’, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে যারা নিরন্তর উস্কানিমুলক বিদ্বেষ প্রচার করে সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদেরও শাস্তির দাবি জানিয়েছে পরিষদ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পালনের কথাও দাবিপত্রে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারকে। সাম্প্রতিক অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক ক্ষতিপুরণের দাবিও জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ।
এ দিন ঢাকার সভা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সাম্প্রতিক অশান্তিতে যুক্ত দুষ্কৃতীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে এ বছর কালীপুজোর দিন আলোর উৎসব দীপাবলি পালন করা হবে না। দেশের সব মণ্ডপ ও মন্দিরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরবতা পালন করা হবে।
রংপুরের পীরগঞ্জে অশান্তির মূল আসামি সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। সে কারমাইকেল কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের নেতা। গ্রেফতারের পরে ছাত্র লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। গত তিন দিনে সেখানে সরকারের পক্ষে অশান্তির শিকার পরিবারগুলির জন্য অর্থ, রেশন ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গরিব পরিবারগুলির ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও শাসক দল আওয়ামী লীগের এক দল নেতা ও সাংসদ সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহায়ক বিপ্লব বড়ুয়া। নোয়াখালি, ফেনি এবং চাঁদপুরেও আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে ত্রাণ বিলি করেছেন। সেখানেও টিনের ঘর তৈরি করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ৩৭টি জেলায় পুলিশের পাশাপাশি ১১৭ প্লাটুন আধাসামরিক বাহিনী নোতায়েন করা হয়েছে। ১০২টি মামলা করা হয়েছে ২০,৬১৯ জনের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৮৪ জনকে।