মিখাইল গর্বাচভ।
‘যখন বন্ধুরা দেখা করতে আসেন, আমাদের হৃদয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমাদের মাঝে আপনাকে পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’
প্রাক্তন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের প্রয়াণে তাঁর দুই বহু আলোচিত ভারত সফরের (১৯৮৬ এবং ৮৮) কথা আজ স্মরণ করছে রাজধানী। আর সেই প্রসঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সাংবাদিক সম্মেলনে করা উপরোক্ত বিখ্যাত উক্তিটিও আলোচনায় উঠে এসেছে। চিনের ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা আজকের রাশিয়া-নীতিতে ভারতকে যখন ক্রমশ সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, তখন গর্বাচভকে একনিষ্ঠ ভারতবন্ধু হিসাবেই উল্লেখ করছেন কূটনীতিকরা।
প্রথমবার গর্বাচভ ভারতে আসেন ১৯৮৬ সালে। তাঁকে রাজীব গান্ধী সরকার যে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল তা এক কথায় বেনজির। বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত সারি দিয়ে পতাকা হাতে স্বাগত জানিয়েছিল স্কুলের বাচ্চারা। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন রাজীব দম্পতি। আমেরিকার কাগজে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে সুসজ্জিত হাতি এবং উটে চড়া লাল পোশাকের সেনারা অভ্যর্থনা জানিয়েছিল।
সাংবাদিক সম্মেলনে গর্বাচভ সে বার জানান, “আমরা বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এমন একটি পদক্ষেপও নেব না, যা ভারতের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে।” প্রথম সফরে একটি বিশাল প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনা প্রধান উপপ্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী— কার্যত গোটা মন্ত্রিসভাই। সে সময়ের সংবাদপত্রের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সাতটি বিমান বোঝাই খাদ্য সামগ্রী, নিরাপত্তা এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম এনেছিলেন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট। সঙ্গে ছিলেন অন্তত ৫০০ জন রাশিয়ান নিরাপত্তা কর্মী। গোটা দিল্লি ছেয়ে গিয়েছিল রাজীব-গর্বাচভের যৌথ পোস্টারে। মহাকাশ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ সমঝোতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে শীর্ষ বৈঠকে।
ঘটনা হল, ছিয়াশির সেই সফরটি ছিল গর্বাচভের প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম এশিয়া সফর। চার ঘণ্টা তিনি রাজীব গান্ধীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন, যেখানে দোভাষী ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এর পর তাঁরা সই করেন দিল্লি ঘোষণাপত্র, যেখানে বলা হয়, এই শতাব্দীর শেষে সমস্ত পরমাণু অস্ত্র নষ্ট করে ফেলতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে অহিংস উপায়ে।
এর পরের বছর যখন রাজীব মস্কো সফরে যান, তখনও দুই নেতা একান্তে প্রায় ছ’ঘণ্টা বৈঠক করেন। গর্বাচভ মস্কোর একটি সৌধ উৎসর্গ করেন ইন্দিরা গান্ধীর নামে।
১৯৮৮ সালে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক জোরদার করতে ফের নয়াদিল্লি আসেন গর্বাচভ। তবে সে বারের সফর তত উচ্চকিত ছিল না ভূকৌশলগত কারণে। দেশেরভিতর থেকে প্রশ্ন উঠছিল, মস্কো-নয়াদিল্লি সম্পর্কে যথেষ্ট শীতল আচরণ করছে। সে সময় গর্বাচভ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটনার চেষ্টা করছেন। নয়াদিল্লির একটা অংশ সন্দিহান ছিল, সেই নতুন কূটনৈতিক বাতাবরণে শেষ পর্যন্ত ভারতের কী পরিণতি হবে। তবে তাঁর সেই সফরে গর্বাচভকে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।