দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ চলছে সুড়ঙ্গে। মঙ্গলবার মস্কোয়। ছবি: এএফপি।
অন্ধকার, গভীর সুড়ঙ্গ। তার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে পড়ে রয়েছে তিন চারটি কামরা। দেখে কল্পনাও করা সম্ভব নয় কিছু ক্ষণ আগে তাতেই সফর করছিলেন মস্কোর বহু যাত্রী। তাঁদের কাউকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সঙ্কটজনকদের চাপানো হয়েছে এয়ার-অ্যাম্বুল্যান্সে। মঙ্গলবার সকালে মস্কোর ভূগর্ভস্থ মেট্রোয় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২০। আহত অন্তত ১০০।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন? মস্কো প্রশাসন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে নির্ধারিত সময়েই ছেড়েছিল ট্রেনটি। কিন্তু মাঝপথে আচমকাই প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষে সেটি। সেই ধাক্কায় যাত্রীরা একে উপরের ঘাড়ে এসে পড়েন। মারাত্মক চোট পান অনেকে। তবে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে সামনের দিকের তিনটি কামরার। একটির উপর আর একটি উঠে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। আর সেই ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে যান বহু যাত্রী। গোটা ট্রেনের কামরার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিক্ষিপ্ত শর্ট সার্কিট আর ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায় গোটা ট্রেন। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাকি কামরার যাত্রীরাও। এক যাত্রীর বয়ানে, “মনে হল যেন ট্রেনটা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। ...ব্রেকের ধাক্কায় আমিও অনেকের মতো কামরার মাঝখানে গিয়ে পড়ে যাই।”
দুর্ঘটনার ছ’মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় উদ্ধারকারী দল। কিন্তু স্ল্যাভিক বুলেভার্ড এবং পার্ক পোবেদি মেট্রো স্টেশনের মাঝামাঝি ভূগর্ভস্থ যে সুড়ঙ্গের ভিতর দুর্ঘটনাটি হয়েছিল, তা বেশ গভীরে। ফলে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। কিন্তু সব যাত্রীকেই বের করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন উদ্ধারকারীরা। তবে দুর্ঘটনার জেরে মেট্রোর লাইনের অবস্থা খুব খারাপ। অন্তত ২৪ ঘণ্টা লাইনটি বন্ধ থাকবে বলে খবর।
তথ্য বলছে, ওই লাইনে সাধারণ দিনে অন্তত ৯০ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। এত ব্যস্ত রুটে কী ভাবে এই দুর্ঘটনা তা নিয়ে এখনও ধন্দ কাটেনি। কারও মতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা। কারও আবার দাবি, ট্রেনের সামনের কোনও একটি কামরার চাকা খুলে যাওয়ায় এই বিপত্তি। তবে নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তাদের সকলেই। ২০১০-এ জোড়া আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মস্কোরই মেট্রোয় অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবারের এই দুর্ঘটনা সেই স্মৃতিকেই উস্কে দিচ্ছে।