সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (বাঁ দিকে)। কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
তার উপস্থিতি জানা ছিল বিজ্ঞানীদের। তাকে নিয়ে গবেষণা করে ২০২০ সালে নোবেলও জিতেছেন তিন পদার্থবিজ্ঞানী। কিন্তু ছায়াপথের (মিল্কি ওয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ) কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরের (সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল) কোনও ছবি এত দিন ছিল না। বৃহস্পতিবার সেই ‘শান্ত দৈত্যের’ ছবি প্রকাশ করলেন বিজ্ঞানীরা। ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন টেলিস্কোপ’ প্রজেক্টে এই ব্ল্যাক হোলের ছবি ধরা পড়েছে। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্যাজিট্যারিয়াস-এ’।
মহাকাশ বিজ্ঞানে এই আবিষ্কার যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন অনেকে। এই গবেষণাটি ‘অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটারস’ নামে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ব্ল্যাক হোল আদতে কী? এটি একটি মহাজাগতিক বস্তু যার ভর অত্যন্ত বেশি। এই অত্যন্ত বেশি ভরের কারণেই এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল এবং তার ফলেই আলোও এর আকর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারে না। বিজ্ঞানীরা জানান, ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ভর সূর্যের প্রায় ৪০ লক্ষ গুণ বেশি!
বছর তিনেক আগে অন্য একটি নক্ষত্রপুঞ্জের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু যে নক্ষত্রপুঞ্জে নিজেদের বাস তার কেন্দ্রে থাকা এই ব্ল্যাক হোলের ছবি মেলেনি। তবে ছায়াপথের এই কৃষ্ণগহ্বরটিও কাছে নয়। পৃথিবী থেকে তাঁর দূরত্ব ২৭ হাজার আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আলোর গতিতে ছুটলেও পৃথিবী থেকে ওই গহ্বরের কাছে পৌঁছতে ২৭ হাজার বছর লাগবে।
পদার্থবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সঙ্গে বঙ্গভূমিরও যোগ রয়েছে। সেই যোগসূত্র গড়ে তুলেছেন নাগেরবাজারের বাসিন্দা কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো কৌশিক ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’ প্রকল্পে যুক্ত। এ দিন অবশ্য তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ছেলের এই কৃতিত্বে আপ্লুত তাঁর বাবা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, খড়্গপুর আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষে আমস্টারডামে পাড়ি দেন কৌশিক। সেখানে পিএইচডি শেষ করে পোস্ট-ডক্টরেট করতে গিয়েছেন আমেরিকায়।
ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি ব্ল্যাক হোল সংক্রান্ত গবেষণায় বিশেষ কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন আর এক বঙ্গসন্তান, পুণের আইইউকা-র সহকারী অধ্যাপক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তবে সেই গবেষণার সঙ্গে এ দিনের ব্ল্যাক হোলটির সরাসরি সম্পর্ক নেই।