(বাঁ দিকে) ঋষি সুনক। কিয়ের স্টার্মার (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
“পরিবর্তনের কাজ আজ থেকেই শুরু হবে।” লেবার পার্টির বিপুল জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে এমনটাই বললেন দলের শীর্ষ নেতা কিয়ের স্টার্মার। ১৪ বছর পর ব্রিটেনে ক্ষমতায় ফিরছে লেবার পার্টি। গত নির্বাচনের তুলনায় তারা ২১১টি আসন বেশি পেতে চলেছে। অন্য দিকে সুনকের কনজ়ারভেটিভ পার্টি হারাতে চলেছে ২৫০টি আসন।
ব্রিটেনের হবু প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের একটি পোস্টে মোদী ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা জানান। আরও একটি পোস্ট করে ব্রিটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনককেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কনজ়ারভেটিভ পার্টি শোচনীয় ভাবে পরাজিত হলেও নিজের রিচমন্ড অ্যান্ড নর্থঅ্যালার্টন আসনে জিতলেন ব্রিটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক।
পূর্ণাঙ্গ ফলপ্রকাশের আগেই পরাজয় স্বীকার করে নিলেন ব্রিটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ৪০০-র কাছাকাছি আসন পেয়ে ব্রিটেনে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে লেবার পার্টি। শোচনীয় পরাজয় হতে চলেছে ক্ষমতাসীন দল কনজ়ারভেটির পার্টি (টোরি)-র। শুক্রবার সকালেই দলের সমর্থকদের উদ্দেশে সুনক বলেন, “লেবার পার্টি সাধারণ নির্বাচনে জিতেছে। আমি কিয়ের স্টার্মারকে ফোন করে এই জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আজই শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমি দুঃখিত। আমি এই পরাজয়ের দায় স্বীকার করছি।”
জনমত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত ছিল যে, বিপুল আসনে জিতে ব্রিটেনে ক্ষমতায় আসতে চলেছে লেবার পার্টি। সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসার পর দলের প্রধান স্টার্মার বলেছিলেন, “ভোটারেরা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।” লন্ডনের হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাস আসন থেকে ১৮ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন স্টার্মার। নিজের জয় নিশ্চিত হতেই ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্টার্মার বলেন, “সব কিছুই আপনারা শুরু করেছিলেন। আপনারাই ভোট দিয়েছেন। এ বার আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।”
ভারতীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে ১১৮টি আসনে জয়ী বা এগিয়ে লেবার পার্টি। মাত্র ১৫টি আসনে কনজ়ারভেটিভ পার্টি। লিবেরাল ডেমোক্র্যাটসরা ১৪টি আসনে এগিয়ে। নতুন দল রিফর্ম ইউকে এগিয়ে দু’টি আসনে।
ভোটগণনা শুরু হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রথম আসনে জয় লাভ করেছে ঋষি সুনকের দল কনজ়ারভেটিভ। এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি আসনে জয়লাভ করেছে টোরিরা। অপর দিকে, কিয়ের স্টার্মারের দল লেবার পার্টি ৫০টি আসনে জয়লাভ করে ফেলেছে।
১০, ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পোষা বিড়াল ল্যারি। ‘চিফ মাউসার’ও বটে। গত ১৪ বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ল্যারিই এক মাত্র অপরিবর্তিত ডাউনিং স্ট্রিটে। ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চলছে সে।
জনমত সমীক্ষা বলেছে, নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরেই দলের সমর্থকদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন ফারাজ। একটি ভিডিয়োবার্তায় তিনি বলেছেন, “প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গিয়েছে।” এখনও পর্যন্ত একটি আসনে জয়লাভ করেছে ফারাজের দল
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (ভারতে দুপুর সাড়ে ১২টা) শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। চলেছে রাত ১০টা পর্যন্ত। তার পরেই শুরু হয়েছে গণনা। শুক্রবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা কে হতে চলেছেন।
১৯৪৫ সালের পর এই প্রথম বার জুলাই মাসে ভোট হচ্ছে ব্রিটেনে। এ বারের নির্বাচনে মোট ৪৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ৪০ হাজার বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল এবং চার্চে বুথ গঠন করা হয়েছিল। মোট ভোটারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লক্ষ ১৪ হাজার ১২৮।
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি এ বার ৪০০-র বেশি আসন পেয়ে ১৪ বছরের কনজ়ারভেটিভ শাসনের ইতি টানতে চলেছে। ৪৪ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কনজ়ারভেটিভরা ১০০-র নীচে নেমে শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ ফল করতে পারে বলেও পূর্বাভাস মিলেছে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায়। জনমত সমীক্ষা বলছে, লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পাবে, টোরিরা পাবে ২০ শতাংশ ও নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ভোট কেটে টোরিদের বড় ক্ষতি করতে চলেছেন রিফর্মিস্টরা। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আসনও এ বার অন্তত তিন গুণ বেড়ে ৪০ ছুঁতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। লড়াইয়ে রয়েছে গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ ছোট–বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবং নির্দলেরাও। ইতিহাস বলছে, ভারতের মতোই ব্রিটেনেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ফল অতীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
ব্রেক্সিট–পরবর্তী সময় থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের জনগণ বিরক্ত বলে জনমত সমীক্ষাগুলির ইঙ্গিত। তা ছাড়া টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও রয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ’। পাশাপাশি, গত পাঁচ বছর ধরে টোরিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তিন বার প্রধানমন্ত্রী বদলের প্রভাবও পড়তে পারে ভোটে। অন্য দিকে, লেবারদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তাঁদের অ-শেতাঙ্গ ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন। স্টার্মার গাজ়া হামলায় ইজ়রায়েলকে সমর্থন এবং অভিবাসন বিরোধী কড়া অবস্থান প্রকাশ করে সেই পথ প্রশস্ত করেছেন ইতিমধ্যেই। যার জেরে গত এক বছরে লেবার পার্টির সদস্যসংখ্যা কমেছে দু’লক্ষের বেশি! যা প্রায় ৪০ শতাংশ।