পাকিস্তানের একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে পুলিশের পাহারা। ছবি: রয়টার্স।
ভোটের দিনেও রেহাই নেই। বৃহস্পতিবার ভোট চলার মধ্যেই পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে দু’টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুই জঙ্গি হামলায় মোট তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন। বালুচিস্তানে নিহত হয়েছেন দুই নিরাপত্তা আধিকারিক, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে হয়েছেন এক পুলিশকর্মী। তবে এই দুই হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মোবাইল পরিষেবা চালুর দাবিতে সরব হল পাকিস্তানের দলগুলি। বেনজির-পুত্র বিলাবল নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে দ্রত মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তাঁর দল পিপিপি যেন নির্বাচন কমিশন এবং আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, সেই আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, ইমরানের দল জানিয়েছে, একাধিক বিধিনিষেধ থাকায় তাদের সদস্য-সমর্থকেরা ফোন ব্যবহার করেই মানুষজনকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসছিল। কিন্তু পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় তাদের সেই চেষ্টা মার খেয়েছে বলে দাবি পিটিআই-এর।
জেলে বসেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পিটিআই প্রধান ইমরান খান। লাহোরের একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিলেন আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ় শরিফ। তবে তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগেই পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিতই থাকতে হচ্ছে ইমরান-পত্নী বুশরা বিবিকে।
লড়াইয়ে না থেকেও প্রবল ভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তাঁর দল পিটিআই। ইমরান একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে বন্দি। অন্য দিকে, তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট কেড়ে নিয়েছে সে দেশের নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে পিটিআই কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই বেগুন প্রতীক নিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, পাক সেনা চক্রান্ত করে ‘ভাল’ প্রতীক বেছে নিতে বাধ্য করছে। পাকিস্তানের হেঁশেলে অবশ্য বেগুন পরিচিত একটি সব্জি। তাই ভোটদাতাদের কাছে সেটির আবেদন নেহাত কম হবে না বলেই আশা তাঁদের।
ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়নি। প্রশাসনের তরফে এই মর্মে কোনও নির্দেশও আসেনি। এমনই দাবি করল সে দেশের টেলিকম বিভাগ।
পাকিস্তানে ভোট শুরু হতেই মোবাইল পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিল সে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক। সে দেশের সংবাদপত্র ‘ডন’-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’র কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের নির্বাচনে সে দেশের সেনাবাহিনী বরাবরই অন্যতম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকে বলে অভিযোগ। কার্যত তারাই নাকি ঠিক করে দেয়, কোন দল মসনদে বসবে এবং কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, সেনার সমর্থন নিয়ে চতুর্থ বারের জন্য ইসলামাবাদের মসনদে বসতে চলেছেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। ‘জাদুসংখ্যা’ ছুঁতে না পারলেও নওয়াজের দল বাকিদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে হয়তো আবার বেনজির-পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারির পিপিপি-র সমর্থন নিয়ে সরকার গড়বেন তিনি। এর আগে দু’বার সেনার ‘অতিসক্রিয়তা’য় মেয়াদ পূরণের আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে নওয়াজকে। এ বার নাকি সেই নওয়াজকেই মসনদে দেখতে চাইছে পাক সেনা।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হল পাকিস্তানে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তার পর শুরু হবে গণনাপর্ব।
ভোটের আগেই সে দেশে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক জঙ্গিহানা। বুধবার বালুচিস্তানের পিশিন জেলায় জোড়া বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তার আগে সোমবার ভোরে সোমবার ভোরে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলার চৌধওয়ান পুলিশ থানায় ঢুকে ১০ পুলিশকর্মীকে খুন করে সন্দেহভাজন তেহরিক-ই-তালিবান বিদ্রোহীরা।
এ বারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র মধ্যে। রয়েছে কট্টরপন্থী জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম দলও। তবে ২০১৮-র নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর স্বীকৃতি পাক নির্বাচন কমিশন বাতিল করায় তারা সরাসরি ভোটের ময়দানে নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বকাপজয়ী পাক ক্রিকেট অধিনায়কের দলের অনেক নেতা ‘নির্দল’ হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইমরান এখন জেলবন্দি।
২০১৮ সালের ভোটে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আসন সংখ্যা ছিল ৩৪২। এর মধ্যে ২৭২টিতে সরাসরি ভোট হয়েছিল। তার মধ্যে পিটিআই ১১৬, পিএমএলএন ৬৪, পিপিপি ৪৩ এবং নির্দল ও অন্য দলগুলির প্রার্থীরা ৪৯টি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন মোট আসন ৩৩৬। কিন্তু তার মধ্যে ভোট হয় ২৬৬টি আসনে। বাকি ৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। এ বার মোট ১৬৭টি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দল পাক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫,১২১। প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে লড়াই করছেন মোট ১২ হাজার ৬৯৫ জন প্রার্থী। ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদাতার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৪ লক্ষেরও বেশি।
পাকিস্তানে দীর্ঘ দিন ধরে চালু রয়েছে ‘এক দেশ এক ভোট’ ব্যবস্থা। পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির পাশাপাশি বৃহস্পতিবার পাক পঞ্জাব, সিন্ধ, খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানে প্রাদেশিক আইনসভার ভোটগ্রহণও হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পরেই শুরু হবে গণনা।