কিসিনিয়া সবচাক। —ফাইল চিত্র।
রাশিয়ার ‘প্যারিস হিলটন’ তিনি। সব সময়ই খবরের শিরোনামে থাকেন কিসিনিয়া সবচাক। আরও একবার রুশ সংবাদমাধ্যম তাঁকে নিয়ে তোলপাড়। এ বারের কারণটা অবশ্য একটু অন্য। প্রেসি়ডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আগামী নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিসিনিয়া। রুশ রাজনীতিতে এখন তাই নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জলঘোলা।
প্রায় দু’দশক ধরে রাশিয়ায় কর্তৃত্ব চলছে পুতিনের। ভোট আগামী মার্চে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, সামনের ভোটেও হইহই করে জিতবেন বর্তমান প্রেসিডেন্টই। আর সেখানেই আপত্তি ৩৫ বছরের কিসিনিয়ার। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দেশের শীর্ষ পদের জন্য লড়ার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর রয়েছে। তাই ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত।
আসলে রাজনীতির পরিবেশেই বেড়ে ওঠা কিসিনিয়ার। আনাতলি সবচাকের মেয়ে তিনি। সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রাক্তন মেয়র আনাতলির হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন বর্তমান রুশ প্রেসি়ডেন্ট। তিনিই নব্বই দশকের গোড়ায় সিটি হলে এক আধিকারিক হিসেবে পুতিনকে এনেছিলেন। তার পর আর সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরেননি পুতিন। ২০০০ সালে মারা যান আনাতলি। কিসিনিয়ার মা, লুডমিলা নারুসোভা রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য। কালই এক রুশ টিভি চ্যানেলকে কিসিনিয়া জানিয়েছিলেন পুতিনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ রাজনীতিতে একই মুখ বার বার দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি।’’
ক্রেমলিন অবশ্য কিসিনিয়ার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও এই সব কিছুর মধ্যেই ‘নাশকতা’ গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। কিসিনিয়ার দাবি, বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমর্থন রয়েছে তাঁর পিছনে। নাভালনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ক্রেমলিন। এ বার তাই ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য ক্রেমলিনের সাজানো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নাভালনি। তিনি আবার কিসিনিয়াকে সমর্থনের কথাও অস্বীকার করেছেন। বরং তাঁর মতো বিরোধীদের আশঙ্কা, কিসিনিয়াকে সামনে দাঁড় করিয়ে কিছু বিরোধী ভোট কাটানোর পরিকল্পনা রয়েছে পুতিনের। সে ক্ষেত্রে আরও একবার ক্রেমলিনে ‘রাজত্ব’ করা আরও সহজ হবে তাঁর। বিরোধীদের মত, স্বচ্ছ ভোট পদ্ধতি দেখিয়ে আদতে নিজের রাস্তা সুগম করার কথাই ভাবছেন পুতিন।
কিন্তু সাক্ষাৎকারে কিসিনিয়া জানিয়েছেন, পুতিনের রাজত্ব শেষ করার জন্য প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার কথা ভেবেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘১৮ বছর বয়সে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সে বার পুতিন প্রেসিডেন্ট হলেন। সে বছর যারা জন্মেছিল, তারা এ বার ভোট দেবে। ভেবে দেখুন এক বার।’’ যদিও প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত এখন নিলেও ২০১২ থেকেই সক্রিয় ভাবে পুতিন সরকারের বিরোধিতা করে আসছেন কিসিনিয়া।
একটি রিয়্যালিটি টিভি শো উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রচারের আলোয় এসেছিলেন কিসিনিয়া। নাম ডম-২। এমনিতে বিভিন্ন ‘পেজ থ্রি’ অনুষ্ঠানে তাঁর ছবি দেখতেই অভ্যস্ত রুশরা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ‘ফলোয়ার’ পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি। পুতিনকে হারিয়ে রুশ রাজনীতিতে কিসিনিয়া কী পরিবর্তন আনতে পারেন, তা জানতেই এখন আগ্রহী রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ।