কবিতা-গানের মধ্যে দিয়ে অনেকেই ভালবাসা প্রকাশ করে থাকেন। স্যামুয়েল কিন্তু সেই গতে বাঁধা পথে হাঁটেননি। চিকিৎসক স্যামুয়েল স্ত্রীদের প্রতি তাঁর প্রেম নিবেদন করেছেন সম্পূর্ণ অন্য উপায়ে, ধাঁধার মধ্যে দিয়ে, ১৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য এবং ১৫ ইঞ্চি প্রস্থযুক্ত পাথরের একটি স্মৃতি সৌধের উপরে।
স্মৃতিসৌধটি তাঁর দুই স্ত্রীর। তাতেই বিভিন্ন অক্ষর খোদাই করে ধাঁধা তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই ধাঁধাতেই লুকিয়ে ছিল স্ত্রীদের প্রতি তাঁর ভালবাসা। যার সমাধান করতে ৪০ বছর লেগে গিয়েছে। চিকিৎসক স্যামুয়েল কিন্তু কখনও নিজে ধাঁধার সমাধান করেননি। তাঁর মৃত্যুর পর এক মহিলা তা সমাধান করেন।
তাঁর পুরো নাম স্যামুয়েল বিন। তিনি প্রথম জীবনে এক জন শিক্ষক ছিলেন। তার পর তিনি চিকিৎসাবিদ্যা অনুশীলন করতেন। শেষ জীবনে যাজক হয়ে উঠেছিলেন। চিকিৎসক হিসাবে অনুশীলন করার সময়ই অন্টারিও-র লিনউডে বাস করতেন। তখনই এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে এই সৌধ নির্মাণ করিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে আরও একটি বিয়ে করেন তিনি। ১৯০৪ সালে কিউবায় জলে ডুবে এক দুর্ঘটনায় মারা যান স্যামুয়েল।
হেনরিয়েটা এবং সুসেন ছিলেন স্যামুয়েলের প্রথম দুই স্ত্রী। হেনরিয়েটা ফারির জন্ম ১৮৪২ সালে ফিলাডেলফিয়ায়। ১৮৬৫ সালে স্যামুয়েলকে বিয়ে করেন তিনি। ওই বছরই সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয় তাঁর। বিয়ের মাত্র সাত মাস পরই মারা যান হেনরিয়েটা।
হেনরিয়েটার অন্ত্যেষ্টির কার্ডেও ধাঁধা ছিল। ধাঁধার মধ্যে দিয়েই আমন্ত্রিতদের জানানো হয়েছিল কত বছর বয়সে, কী ভাবে হেনরিয়েটার মৃত্যু হয়েছিল। সেই কার্ডে উল্লেখ ছিল, ১১ সপ্তাহের অসুস্থতার পর ২৩ বছর দু’মাস এবং ১৭ দিন বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। পেশায় মডেল ছিলেন হেনরিয়েটা।
তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন সুসেন ক্লেগ। ১৮৪০ সালে ওয়েলেসলি এবং ক্রসহিলের মাঝামাঝি একটি অঞ্চলে জন্মেছিলেন সুসেন। তাঁদের একটি মেয়েও রয়েছে। ১৯৬৭ সালে ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয় স্ত্রী সুসেনেরও মৃত্যু হয়। একই ভাবে সুসেনের অন্তেষ্টির কার্ডেও ধাঁধা ছিল।
অন্টারিও-র ক্রসহিলে দুই স্ত্রীকেই পাশাপাশি কবর দেন স্যামুয়েল। স্মৃতিসৌধের উপরেও বিভিন্ন হরফ সাজিয়ে ধাঁধার জাল বিছিয়ে দেন তিনি। সৌধের উপর মোট ২২৫টি অক্ষর খোদাই করেন তিনি। সৌধের উপরে এক দিকে হেনরিয়েটা এবং অন্য দিকে সুসেনের নামও খোদাই করেন। সৌধের নীচে লেখা ‘রিডার মিট আস ইন হেভেন’ অর্থাৎ পাঠকদের সঙ্গে স্বর্গে আমাদের পরিচয় হবে।
ধাঁধার অক্ষরগুলিতে আসলে কী লেখা তা উদ্ধার করার চেষ্টা বহু মানুষ করেছেন। ধাঁধার টানেই বার বার ছুটে এসেছেন অনেকে। কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে জন হামন্ড নামে ওই কবরস্থানের নিরাপত্তারক্ষী ধাঁধা সমাধানের দাবি করেন। কিন্তু নিজের উত্তর কখনও প্রকাশ করেননি তিনি।
এর পর ১৯৭০ সালে ৯৪ বছরের এক বৃদ্ধা প্রথম এর সমাধান করেন। তাঁর মতে সৌধতে লেখা, ‘এস বিনের প্রথম স্ত্রী হেনরিয়েটার স্মৃতিতে। ১৮৬৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। ২৩ বছর দু’মাস ১৭ দিন বয়স হয়েছিল’। সুসেনের সম্বন্ধেও লেখা ছিল ওই সৌধতে। ‘দ্বিতীয় স্ত্রী সুসেন ২৭ এপ্রিল ১৮৬৭-তে মারা যান। বয়স হয়েছিল ২৬ বছর ১০ মাস এবং ১৫ দিন।’
এর পরই তাতে লেখা, ‘এক জন স্বামী খুব ভাগ্য করে এ রকম দুই স্ত্রী পেয়েছিলেন। তাঁরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। তাঁদের এখন স্বর্গে ঠাঁই হয়েছে। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন যাতে স্বর্গে তাঁদের সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ হয় আমার।’