Donald Trump-Kamala Harris

কৌশলী প্রশ্নে প্রথম বিতর্কে বাজিমাত কৌঁসুলি কমলার

গত ২৭ জুন আর একটি বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার পরেই নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২১
Share:

(বাঁ দিকে) কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

মঙ্গলবার সন্ধেবেলা ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রথম বিতর্কসভা অনুষ্ঠিত হল। শুধু ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের জন্য নয়, অনিশ্চিত ভোটারদের জন্যও এই বিতর্কসভা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

Advertisement

গত ২৭ জুন আর একটি বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার পরেই নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। ডেমোক্র্যাট দলের নতুন প্রার্থী হন হ্যারিস। প্রথমে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আর কোনও বিতর্কে অংশ নেবেন না কারণ, ‘ডেমোক্র্যাট দল কাকে প্রার্থী করবে, তা-ই ঠিক করতে পারছে না’। ফলে আর বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি ‘সময় নষ্ট করতে’ চান না। কিন্তু জনমত সমীক্ষায় হ্যারিসের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায়, কিছুটা দলের চাপেই, বিতর্কে অংশ নিতে রাজি হন ট্রাম্প।

এই বিতর্কসভায় রাজনীতি, অর্থনীতি, বিদেশনীতি, অভিবাসন-সহ নানা বিষয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মতামত শোনা গেল। প্রথমেই উঠল দেশের অর্থনীতির প্রসঙ্গ। গত কয়েক বছরে আমেরিকার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে অনেকটা, মানুষকে রোজকার জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে— এই বিষয় নিয়েই বিতর্কের শুরু হয়। বেহাল অর্থনীতির জন্য ট্রাম্প বর্তমান সরকারকেই দায়ী করেন। অন্য দিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস দাবি করেন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের বেকারত্ব অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সরকার সেই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বার করে এনেছে। হ্যারিস আরও জানান, তিনি ক্ষমতায় এলে অর্থনীতির যে রূপরেখা তৈরি করেছেন, তাতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের সুবিধা হবে।

Advertisement

রিপাবলিকান প্রার্থীকে সরাসরি আক্রমণ করে কমলা বলেন, ‘‘ট্রাম্পের কনজ়ারভেটিভ অর্থনৈতিক প্ল্যান ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ কোটিপতি ধনকুবেরদের কর কমানোর লক্ষে তৈরি করা হয়েছে।’’

বিতর্কে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল অভিবাসন নীতি। বাইডেন-হ্যারিসের অভিবাসন নীতির জন্য আমেরিকা অবৈধ অভিবাসীতে ভরে গিয়েছে, এই বলে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকার প্রত্যেকটা প্রদেশে, প্রত্যেক জায়গায় অন্য দেশের লোক, যারা ইংরেজি জানে না এবং সম্ভবত তারা কোন দেশে আসছে সেটাও জানে না।’’

ট্রাম্পের আরও দাবি, ‘‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অপরাধ কমে গিয়েছে কারণ আমেরিকা অন্যান্য দেশ থেকে আসা অপরাধীতে ভরে গিয়েছে।’’ ট্রাম্প দাবি করেন যে তিনি শুনেছেন, ওহায়োর স্প্রিংফিল্ড শহরে অভিবাসীরা ‘পোষ্যদের চুরি করে খেয়েছে’। যা শুনে ‘মিথ্যাবাদী, মিথ্যাবাদী’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন কমলা।

এক জন মহিলা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে এ বারের প্রচারে হ্যারিসের অন্যতম হাতিয়ার— সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক কঠোর গর্ভপাত-বিরোধী আইনের কড়া ভাষায় বিরোধিতা করা। নিজেদের শরীরের উপর, প্রজননের ক্ষমতার উপর অধিকার মেয়েদের ফিরিয়ে দিতে হবে, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ফের সে কথা বলেন কমলা। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতিরা গর্ভপাত-বিরোধী আইন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের নিয়োগ হয়েছিল ট্রাম্পের জমানাতেই।

২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল বিল্ডিং আক্রমণের ‘নেতৃত্ব দেওয়া’র জন্য হ্যারিস ট্রাম্পকে ‘অপরাধী’ বলে আক্রমণ করেন। বলেন, বিভিন্ন দেশের একনায়কদের সঙ্গে ট্রাম্প অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তিনি ক্ষমতায় এলে নিজেও এমনই এক স্বৈরাচারী শাসক হবেন। ট্রাম্প পাল্টা হ্যারিসকে ‘মার্কসিস্ট’, ‘কমিউনিস্ট’ বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, এ রকম এক জন ‘র‌্যাডিকাল লেফটিস্ট’ ক্ষমতায় এলে দেশের সর্বনাশ হবে।

নব্বই মিনিটের বিতর্কে প্রতিটি বলেই এগিয়ে ব্যাট চালিয়েছেন পেশায় আইনজীবী কমলা। আদালত কক্ষে যে ভাবে নিজের পক্ষে সওয়াল-জবাব করেন এক জন কৌঁসুলি,
সে ভাবেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর পর তোপ দেগেছেন কমলা। তাঁর শরীরী ভাষাও ছিল যথেষ্ট সাবলীল, অনেক সময়ে বেশ আক্রমণাত্মকও। বিতর্কের পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আলোচনা করেছেন, কী ভাবে কমলা সমানে ট্রাম্পের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। অন্য দিকে, ট্রাম্প প্রায় সব সময়েই প্রতিপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে
মন্তব্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement