মুক্তির পর। ছবি: রয়টার্স।
রোহিঙ্গা-হত্যা নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মায়ানমার সরকারের কোপে পড়েছিলেন তাঁরা। ২০১৭-র ডিসেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কও সোয়ে ও-কের। ৫০০ দিনের বেশি জেলবন্দি থাকার পরে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাঁদের মুক্তি দিল মায়ানমার।
সরকারি গোপনীয়তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল এই দু’জনকে। গত সেপ্টেম্বরে সাত বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁদের। এর পরেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে মায়ানমার সরকার। প্রশ্ন ওঠে দেশের গণতন্ত্র নিয়েও। এরই মধ্যে গত মাসে পুলিৎজার পুরস্কার পান ওয়া লোন ও কও সোয়ে। আজ মুক্তি পাওয়ার পরে ওয়া লোন বলেছেন, ‘‘কত তাড়াতাড়ি নিউজ়রুমে ফিরব ভাবছি। পরিবার, সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় অত্যন্ত খুশি।’’ স্বামীর গ্রেফতারির পরেই ওয়া লোনের স্ত্রী জানতে পেরেছিলেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। আজ প্রথম খুদে মেয়ের মুখ দেখলেন বছর তেত্রিশের সাংবাদিক। মায়ানমারে নতুন বছর উপলক্ষে প্রেসিডেন্টের অনুমতিতে আজ ওই দুই সাংবাদিকের পাশাপাশি মুক্তি দেওয়া হয়েছে আরও সাড়ে ছ’হাজার বন্দিকে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর রাখাইন প্রদেশের ইন ডিন গ্রামে সেনার হাতে ১০ জন রোহিঙ্গা খুনের প্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন মায়ানমারের নাগরিক ওই দুই সাংবাদিক। সেই সময়ে দু’জন পুলিশকর্মী তাঁদের হাতে গোপন নথি তুলে দেওয়ার টোপ দিয়ে একটি রেস্তরাঁয় ডেকে আনেন। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। ওই পুলিশকর্মীরা পরে জানিয়েছেন, তাঁদের ‘স্টিং অপারেশন’ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
ওই সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে চাপ বাড়াচ্ছিল বিশ্ব। তাঁদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয় সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিক মহল, বিশ্বনেতারা। ব্রিটিশ বিদেশসচিব জেরেমি হান্ট জানিয়েছেন, ওয়া লোন ও কও সোয়ের মুক্তির জন্য তিনি আউং সান সু চি-র সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছিলেন। সু চি-র সঙ্গে কথা বলেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। দুই সাংবাদিকের আইনজীবী অমল ক্লুনি বলেছেন, ‘‘সৎ ও নির্দোষ সাংবাদিকরা যাতে বিচার পান তার জন্য রয়টার্স যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে তা প্রশংসনীয়। রাষ্ট্রপুঞ্জ এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘আমরা এই মুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে এগোচ্ছে মায়ানমার। দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি পালনের প্রমাণ এই ঘটনা।’’