বেলমোখতার
ফের বড়সড় সাফল্য পেল মার্কিন সেনা। রবিবার লিবিয়ায় মার্কিন বিমান হানায় মৃত্যু হল আলজেরীয় আল-কায়দার অন্যতম নেতা মোখতার বেলমোখতার-এর। লিবিয়ার প্রশাসন সূত্রে খবর, সে দেশের পূর্বে মার্কিন বিমান হানায় বেলমোখতার-সহ বেশ কয়েক জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তবে, বিমান হানার কথা স্বীকার করলেও বেলমোখতারের মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিত নয় মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, এই বিমানহানার মূল লক্ষ্য ছিল বেলমোখতার। বেশ কয়েকটি এফ-১৫ই বিমান এই হামলায় অংশ নেয়। লক্ষ্যে বেশ কয়েক বার বোমা বর্ষণ করা হয়। নিহত হয় বেশ কয়েক জন জঙ্গি। তবে তার মধ্যে বেলমোখতারও আছে কি না তা নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক পরীক্ষা প্রয়োজন বলে মার্কিন প্রশাসনের মত। সেই পরীক্ষা করতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে বলে তাদের দাবি।
এমনিতেই বেলমোখতারকে নাগালে পেতে বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। তার মৃত্যু হলে তা সন্ত্রাসবিরোধী মার্কিন প্রচেষ্টার অন্যতম সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হবে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভেন ওয়ারেন জানান, লিবিয়ায় মার্কিন বিমান হানার লক্ষ্য ছিলেন বেলমোখতার। আল-কায়দার সঙ্গে যোগাযোগ এবং জঙ্গি অভিযান চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস বেলমোখতারের রয়েছে বলে ওয়ারেন জানিয়েছেন।
দীর্ঘ দিন ধরেই বেলমোখতারের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছিল বিশ্বের নানা গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১২-র শেষের দিকে তাকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে দেখা যায়। কিন্তু, মার্কিন যুদ্ধবিমান দেরিতে পৌঁছনোয় সে যাত্রায় বেঁচে যায় সে। তাকে খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে মার্কিন সেনা স্বীকার করে নিয়েছে।
আমেরিকা এবং পশ্চিমী বিশ্বের পক্ষে বিপজ্জনক বলেই বেলমোখতারের উপরে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত হয়। গদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে এই প্রথম লিবিয়ায় আঘাত হানল মার্কিন সেনা। আঘাত হানার সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। গদ্দাফি চলে যাওয়ার পরেও শান্তি ফেরেনি লিবিয়ায়। সরকার থাকলেও তাদের ক্ষমতা বড়ই সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী লিবিয়ার নানা অংশে ক্ষমতা দখল করে রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলি নিজেদের মধ্য প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষিতেই লিবিয়ায় ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছিল ইসলামিক স্টেট। তাই বেলমোখতারকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর। যদিও তার শেষ প্রচারে আল-কায়দার প্রতিই আনুগত্য বজায় রেখেছিল বেলমোখতার।
মোখতার বেলমোখতার
জন্ম: আলজেরিয়া
ইতিহাস: ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে লড়াই করে। লড়াইয়ে একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য তাকে লায়ৌর বলে ডাকা হয়। সিগারেট চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে মালবারো-ম্যান বলেও ডাকা হয়।
১৯৯০-এর দশকে আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নেয়।
২০০৮-এ কানাডার কূটনীতিবিদ রবার্ট ফ্লাওয়ারকে অপহরণ করে। চার মাস পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
২০১৩-র জানুয়ারিতে বেলমোখতারের নেতৃত্বে আলজেরিয়ার একটি গ্যাস কারখানায় হামলা চলে। এতে ৩৮ জন বিদেশি মারা যান। যাঁর মধ্যে তিন জন মার্কিন নাগরিক।
বর্তমানে প্রভাব: সাহার মরুভূমির দক্ষিনে সেনেগল, চাদ, লিবিয়া-সহ বিস্তির্ণ অঞ্চলে তার প্রভাব রয়েছে। জঙ্গিহানা ও দল পরিচালনার বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ হওয়া আর আর এক নাম রাজপুত্র।
দল: নানা সময়ে নানা নামের জঙ্গিদলের নেতা হলেও সে বরাবরই আল-কায়দার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে গিয়েছে।